চট্টগ্রামে বছরে সাত খুন: দিনের আলোয় গুলি, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন

আপলোড সময় : ০৬-১১-২০২৫ ০২:৩৭:১২ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ০৬-১১-২০২৫ ০২:৩৭:১২ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামে গত এক বছরে জনসম্মুখে অন্তত সাতজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে—বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে ব্যস্ত সড়কে, মানুষের চোখের সামনে। হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করলেও একটিও ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের নজির নেই। এর ফলে নগরবাসীর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা ও প্রশাসনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
 

সবশেষ ঘটনায় বুধবার বায়েজিদ থানার চালিতাতলীর খন্দকার পাড়া এলাকায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ নির্বাচনী প্রচারণাকালে অজ্ঞাত হামলাকারীর গুলিতে আহত হন। এ সময় নিহত হন তার সহযোগী, আলোচিত সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা। তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় ছোট সাজ্জাদ ওরফে সাজ্জাদ গ্রুপের সদস্যরা জড়িত থাকতে পারে। ছোট সাজ্জাদ বর্তমানে স্ত্রীসহ কারাগারে থাকলেও, সেখান থেকেই তার অনুসারীরা অপরাধের নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
 

চট্টগ্রামে গুলির ঘটনাগুলোর সূত্রপাত হয় গত বছরের আগস্টে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছোট সাজ্জাদ প্রতিদ্বন্দ্বী আনিস ও কায়সারকে বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় গুলি করে হত্যা করেন। এরপর অক্সিজেন, কালারপুল, পতেঙ্গা ও বাকলিয়া এলাকায় একের পর এক গুলির ঘটনা ঘটে, যেখানে নিহত হন সাধারণ কর্মী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক কর্মীরাও। অধিকাংশ ঘটনার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও অভিযুক্তরা পালাতে সক্ষম হয়।
 

বিশেষ আলোচিত একটি ঘটনায়, গত মার্চে বাকলিয়া এক্সেস রোডে প্রাইভেটকার লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দুইজনকে হত্যা করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে এসে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে—কিন্তু কাছাকাছি থাকা পুলিশ টহল গাড়িটি এলাকাটি ছেড়ে চলে যায়। নিহতদের স্বজনদের দাবি, কর্ণফুলী নদীর বালুমহাল নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং সাজ্জাদকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার সন্দেহ থেকেই হত্যাটি সংঘটিত হয়।
 

এ বছরের মে মাসে পতেঙ্গা সৈকতে নিহত হন ঢাকাইয়া আকবর; একই বছরের অক্টোবরে বাকলিয়া এক্সেস রোডে গুলিতে নিহত হন ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, দুই ঘণ্টা ধরে গোলাগুলির পরও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়নি। স্থানীয়রা জানান, “চট্টগ্রাম এখন এমন শহর, যেখানে গুলি শুনেও কেউ আর অবাক হয় না।”
 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ জানান, সাম্প্রতিক হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন সরোয়ার বাবলা, এরশাদ উল্লাহ নয়। 'হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অনেকেই ইতোমধ্যে জেলে আছে, বাকিরা পলাতক। তাদের শনাক্তে পুলিশের হাতে গুরুত্বপূর্ণ আলামত এসেছে,' বলেন তিনি। কমিশনার আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এসব ঘটনাকে ‘উদ্বেগজনক’ উল্লেখ করে বলেন, রাজনৈতিক সমাবেশ বা প্রচারণার ক্ষেত্রে আগাম নিরাপত্তা সমন্বয় জরুরি।
 

এরশাদ উল্লাহ বর্তমানে নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকদের মতে, তার পায়ে গুলির আঘাত থাকলেও আশঙ্কার কিছু নেই। ঘটনাস্থলে পুলিশ তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।

সম্পাদকীয় :

লাইসেন্স নং: TRAD/DNCC/013106/2024 বার্তা বিভাগ: [email protected] অফিস: [email protected]

অফিস :

যোগাযোগ: মিরপুর, শেওড়াপাড়া হটলাইন: 09638001009 চাকুরী: [email protected]