মাকামে ইব্রাহিমের দোয়া ও নামাজের নিয়ম — তাওয়াফের পর কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত নির্দেশ

আপলোড সময় : ০৪-১১-২০২৫ ১১:৫৮:১৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৪-১১-২০২৫ ১১:৫৮:১৪ অপরাহ্ন
তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহিমে নামাজ ও দোয়া করা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল, যা সরাসরি কুরআনের নির্দেশ এবং নবী মুহাম্মদ ﷺ–এর সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত।
 
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে বলেন—
 
وَٱتَّخِذُوا۟ مِن مَّقَامِ إِبْرَٰهِـۧمَ مُصَلًّۭى ۖ
অর্থ: “আর [হে মুমিনগণ], তোমরা ইব্রাহিমের দাঁড়ানোর স্থান থেকে একটি নামাজের স্থান গ্রহণ করো।”
— সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১২৫
 
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন তাঁরা মাকামে ইব্রাহিমে সালাত আদায় করেন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আঃ) যখন পবিত্র কাবা ঘর পুনঃনির্মাণ করছিলেন, তখন তিনি যে পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে কাজ করেছিলেন, সেটিই “মাকামে ইব্রাহিম” নামে পরিচিত।
 
হাদীসের বিশুদ্ধ সূত্রগুলোতে এ আমলের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে এসেছে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, হযরত উমর (রা.) নবী করিম ﷺ–কে অনুরোধ করেন, “আপনি যদি মাকামে ইব্রাহিমকে নামাজের স্থান বানাতেন!” এরপর আল্লাহ তাআলা উপরোক্ত আয়াত নাজিল করেন।
(সূত্র: সহীহ বুখারী, হাদীস ৪০২, ৪৪৮৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৯৯; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯৫৯–২৯৬০)
 
বিদায় হজের সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ তাওয়াফের পর মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে কাবার দিকে মুখ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন, যাতে তাঁর এবং কাবার মাঝখানে মাকামে ইব্রাহিম ছিল।
(সূত্র: সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৯৫, ১৬২৩, ১৬২৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২১৮, ১২৩৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ৮৫৬, ৮৬২, ২৯৬৭)
 
তাওয়াফের পর দোয়া ও নামাজের পদ্ধতি:
তাওয়াফ সম্পন্ন হলে পুরুষদের ইহরামের উপরের কাপড় উভয় কাঁধে জড়িয়ে নিতে হবে। এরপর মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে কাবার দিকে মুখ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে।
 
প্রথম রাকাতে সূরা আল-কাফিরুন,
 
দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আল-ইখলাস পড়া উত্তম (জামে আত-তিরমিযী, হাদীস ৮৬৯)।
 
 
তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়; মুসল্লি ইচ্ছা করলে অন্য সূরাও তিলাওয়াত করতে পারেন। নামাজের আগে ও পরে দোয়া পাঠ করা মুস্তাহাব (অত্যন্ত সুন্নত অনুসারী আমল)।
 
যদি এলাকাটি অতিরিক্ত ভিড়াক্রান্ত হয়, তাহলে মাতাফ বা মসজিদুল হারামের অন্য যেকোনো স্থানে কাবার দিকে মুখ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা বৈধ। তবে মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে নামাজ পড়াই সর্বোত্তম।
 
ফিকহবিদদের মতে, তাওয়াফ-পরবর্তী দুই রাকাত নামাজ ওয়াজিব। তা মসজিদুল হারামের বাইরে পড়লে তা মাকরূহে তানযীহী (অপছন্দনীয়) হিসেবে বিবেচিত হয়।
(সূত্র: আহকামুল কুরআন – আল-জাসসাস; তাফসির ইবনে কাসির; মানাসিকুল হাজ্জ – মোল্লা আলী কারী, পৃ. ১৫৫–১৫৭; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ১১৬–১১৭; ইলাউস সুনান, ১০/৭৫–৮১)
 
এই দোয়ার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য:
মাকামে ইব্রাহিমে প্রার্থনা করার মাধ্যমে মুসলমানরা নবী ইব্রাহিম (আঃ)–এর ত্যাগ, কর্ম এবং আল্লাহর প্রতি অবিচল আনুগত্যের সঙ্গে নিজেদের বিশ্বাসকে পুনরায় যুক্ত করেন। এটি এমন এক আমল, যা কেবল ইবাদতের আনুষ্ঠানিকতা নয়—বরং ঈমানের শিকড়ে ফিরে যাওয়ার প্রতীক।

সম্পাদকীয় :

লাইসেন্স নং: TRAD/DNCC/013106/2024 বার্তা বিভাগ: [email protected] অফিস: [email protected]

অফিস :

যোগাযোগ: মিরপুর, শেওড়াপাড়া হটলাইন: 09638001009 চাকুরী: [email protected]