রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের একটি পিলার থেকে প্রায় দেড়শো কেজি ওজনের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যুর tragic ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই দুর্ঘটনা ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্পের নকশা ও নির্মাণমান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে।
মেট্রোরেল প্রকল্পের কারিগরি গঠন ও নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞরা পুরো প্রকল্পের কারিগরি অডিট এবং নকশার পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাদের মতে, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশে বারবার দুর্ঘটনা ঘটায় প্রকল্পের নকশাগত ত্রুটি ও গাইডিং মেকানিজমের দুর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, কার্ভ বা বাঁক অংশগুলো মূলত হাই–স্পিড চলাচলের উপযোগী নয়। ফলে প্যাডগুলো স্ক্রু–লক বা নিরাপদ কাঠামোয় স্থাপন ও নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ প্যানেল দিয়ে সমগ্র প্রকল্প পুনরায় মূল্যায়ন করা জরুরি।
ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে জানান, দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে তিনি বিয়ারিং প্যাড স্লিপ বা জার্কিং হতে পারে বলে মনে করছেন। তিনি আরও বলেন, অনুরূপ স্ট্রাকচার অন্যান্য দেশেও আছে এবং পূর্বেও এমন একটি ঘটনার পর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। “আমরা তদন্ত করছি—কেন আগের সংশোধন কার্যকর হওয়ার পরও এমন দুর্ঘটনা ঘটল,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান মনে করেন, বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়া সরাসরি নকশাগত ত্রুটির ফল হতে পারে। তার মতে, ঢাকা মেট্রোরেল হাই-স্পিড করিডর হিসেবে ডিজাইন করা হলেও কার্ভ অংশে সীমাবদ্ধতার কারণে ট্রেনের গতি নির্ধারিত মানে রাখা সম্ভব হচ্ছে না, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তিনি মন্তব্য করেন যে, ইলাস্টোমেরিক রাবার প্যাডগুলোর সঠিক গাইডিং মেকানিজম না থাকায় প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতা বজায় থাকছে না। জাপানি নকশা অনুযায়ী তৈরি হলেও ঢাকার ভূগঠন ও কার্ভযুক্ত সেকশনগুলো যথাযথভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জননিরাপত্তার স্বার্থে এখনই পুরো মেট্রোরেল করিডর পুনরায় অডিট করা এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে নকশার মান যাচাই করা প্রয়োজন।