সাবেক স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বর্তমানে কোথায় আছেন তা নিয়ে বিতর্ক বেড়েই চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও গুঞ্জন রয়েছে যে, তিনি স্বামীসহ দেশের বাইরে, পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে থাকা হত্যা মামলার তদন্ত এক বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি, যার ফলে অন্তর্বর্তী সরকার আইনি পদক্ষেপ নিতে দিচ্ছে না।
বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে জানা গেছে, তিনি দীর্ঘ চার মেয়াদ স্পিকারের পদে থাকার সময় সরকারের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিয়েছেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মত প্রকাশ পেয়েছে। তবে হত্যাসহ গুরুতর অভিযোগের তদন্ত না সম্পূর্ণ হওয়ায় সরকারিভাবে যুক্ত দপ্তরগুলো নীতিনির্ধারকদের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আদালত থেকে পরবর্তী নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী গ্রেপ্তারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে তারা। এছাড়া, কূটনীতিক পাসপোর্ট বাতিলের পর গোপনে সাধারণ পাসপোর্ট পাওয়ার চেষ্টা ও এর সঙ্গে জড়িত অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রবণতা অনির্ধারিত রয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিরীন শারমিনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা এবং আরও দুটি মামলা রয়েছে। মামলার তদন্ত পরিচালনা ও দায়ভার সম্পূর্ণভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তদন্ত শেষ হলে আদালত পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অফিসিয়ালভাবে তাদের কাছে তথ্য নেই, তবে গোপন সূত্রে তিনি ঢাকায় ভাইয়ের বাসায় স্বামীসহ বাস করছেন বলে জানা গেছে।
প্রতিবেশী দেশে অবৈধভাবে পাড়ি দেওয়ার গুঞ্জনও আছে। অন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, পাসপোর্ট বাতিলের পর সাধারণ পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন এবং পরে সীমান্ত পেরিয়ে চলে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো নিশ্চয়তা মেলেনি।
২০২৪ সালের আগস্টে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি আমল আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়, যেখানে সাবেক স্পিকারের তিনবারের সাংসদ আসন এবং তার নির্দেশে স্বামী মুসলিম উদ্দিনকে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে। মামলার তদন্ত সিআইডি করছে, তবে এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। বাদী পরিবারের দাবি, তদন্ত এগুচ্ছে না এবং তারা বিচার পেতে বিচলিত।
ড. শিরীন শারমিনের রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘসময় ধরে আওয়ামী লীগ শীর্ষ ও প্রধান স্পিকার হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছেন। ২০০৯ সালে সংসদ সদস্য হন, ২০১৩ সালে প্রথম নারী স্পিকার হন, এবং পরবর্তী নির্বাচনে তিনবার স্পিকারের পদে নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ও তিনি সংসদে ছিলেন, তবে পরে গোপনে পদত্যাগ পত্র দেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, তাকে পূর্বে গ্রেপ্তারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবে ধরা হয়নি। সরকারি গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত বছর গোপনে তিনি একটি নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতেন এবং পাসপোর্ট অফিসের অবৈধ সহায়তায় নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলেন, যা পরে বাতিল হয়। এই ঘটনায় কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি।
আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হত্যাসহ গুরুতর অপরাধের মামলার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি বিশেষ কমিটি কাজ করছে। বিচার প্রক্রিয়ায় সরকারিভাবে বাধা বা নীতিনির্ধারকদের দ্বিধা বিষয়ক বিস্তৃত অভিযোগ থাকলেও নিশ্চিত ব্যবস্থা গ্রহণ এখনও বকবক মাত্র।