স্তন ক্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর অনেক নারী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান এবং সন্তান জন্মদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে এখন সেই ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব। তবে চিকিৎসার পর গর্ভধারণের বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় এটি চিকিৎসকের পরামর্শ ও সতর্ক পরিকল্পনার মাধ্যমে করা জরুরি।
গবেষণা বলছে, স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর নারীরা গর্ভধারণ করতে পারেন, তবে সিদ্ধান্তটি নির্ভর করে ক্যানসারের ধরন, চিকিৎসা পদ্ধতি ও রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। সাধারণত চিকিৎসকরা চিকিৎসা শেষ হওয়ার দুই থেকে পাঁচ বছর পর গর্ভধারণের পরামর্শ দেন, কারণ এই সময়ের মধ্যে ক্যানসার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি কম থাকে এবং শরীরও পুনরায় স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
চিকিৎসার ধরণ যেমন কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন ও হরমোন থেরাপি অনেক সময় প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে কেমোথেরাপি ডিম্বাশয়ের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, ফলে গর্ভধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। মাসিক ফিরে এলেও তা উর্বরতা নিশ্চিত করে না। তাই চিকিৎসার আগে বা পরে উর্বরতা (fertility) মূল্যায়ন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক ক্ষেত্রে ক্যানসার সারভাইভারদের কয়েক বছর ট্যামোক্সিফেন বা অ্যারোমাটেজ ইনহিবিটর জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হয়, যা গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ। তাই গর্ভধারণের আগে এই ওষুধের ব্যবহার বন্ধ করতে হয় এবং তা কেবল চিকিৎসকের পরামর্শেই করা উচিত।
বর্তমানে ফার্টিলিটি সংরক্ষণের জন্য ন্যূনতম উদ্দীপনা (low-stimulation) বা পরিবর্তিত আইভিএফ (modified IVF) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যা হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ডিম্বাণু সংগ্রহের সুযোগ দেয়। আগে থেকে হিমায়িত ডিম বা ভ্রূণ ব্যবহার করাও নিরাপদ বিকল্প, যা অতিরিক্ত হরমোন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা কমায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্তন ক্যানসার সারভাইভারদের গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র শারীরিক নয়, মানসিক প্রস্তুতির সঙ্গেও যুক্ত। সঠিক পরামর্শ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই যাত্রা হতে পারে নিরাপদ ও আশাব্যঞ্জক।
সূত্র: আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি, ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট (USA), ব্রেস্ট ক্যানসার রিসার্চ ফাউন্ডেশন