বাংলাদেশের শিপিং খাতে এক অদৃশ্য কিন্তু প্রভাবশালী নেটওয়ার্ক নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ট্রাইডেন্ট শিপিং লাইন লিমিটেড, যাদের নাম উঠে এসেছে ইসরাইলভিত্তিক শিপিং জায়ান্ট জেডআইএম ইন্টিগ্রেটেড শিপিং সার্ভিসেস লিমিটেড–এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে। যদিও বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরাইলের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, তথাপি জেডআইএমের ওয়েবসাইটেই ট্রাইডেন্টকে দেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দেখানো হয়েছে—যা আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক নীতির পরিপন্থি এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
নথিপত্র অনুযায়ী, ট্রাইডেন্ট বাংলাদেশে জেডআইএমের সব আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করে। কোম্পানিটির নেতৃত্বে আছেন ব্যবসায়ী ফারুবার আনোয়ার, যিনি একসময় বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) কোষাধ্যক্ষ এবং বর্তমানে এফবিসিসিআইয়ের সদস্য। জানা গেছে, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বন্দরের সঙ্গে একটি সক্রিয় ইসরাইলি বাণিজ্যিক সংযোগ গড়ে উঠেছে।
২০২৪ সালের শুরুতে ট্রাইডেন্টের ঢাকা অফিসে ‘ZIM’ লেখা কেক কাটা হয়, যার ডিজাইনে ব্যবহার করা হয় ইসরাইলি পতাকার রঙ ও প্রতীক—ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক ছড়ায়। কারণ, বাংলাদেশের আইনে ইসরাইলি কোনো সংস্থার আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন অনুমোদিত নয়। তবুও জেডআইএমের অফিসিয়াল অর্গানাইজেশন চার্টে ট্রাইডেন্টের আটজন কর্মকর্তার নাম, পদবি ও ছবি প্রকাশ করা আছে, যেখানে ফারুবার আনোয়ারকে “Country Manager, Bangladesh” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় ২০২৪ সালের ১২ এপ্রিলের পর। “March for Gaza” নামে ঢাকায় আয়োজিত গণবিক্ষোভের খবর ট্রাইডেন্ট অফিস থেকে সরাসরি জেডআইএমের হাইফা সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। ই-মেইলটিতে ফারুবার আনোয়ার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এবং নির্বাচন প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। ইমেইলটি গ্রহণ করেন জেডআইএমের আঞ্চলিক প্রতিনিধি দোতান সার, যিনি পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বড় শিপিং হাউস শারাফ শিপিং এজেন্সির এক কর্মকর্তাকেও মেইলে যুক্ত করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই যোগাযোগ শুধুই ‘বাণিজ্যিক প্রতিনিধি সম্পর্ক’ নয়। বরং এর মাধ্যমে সংবেদনশীল শিপিং ডেটা—যেমন কার্গোর ধরন, গন্তব্য, রপ্তানিকারক-আমদানিকারকের তথ্য—বিদেশি নেটওয়ার্কে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য এসব তথ্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ইসরাইলের জেডআইএম শিপিং কোম্পানিটি ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কনটেইনার পরিবহন নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এর সদর দপ্তর হাইফা বন্দরে, যা ইসরাইলের সামরিকভাবে কৌশলগত অঞ্চল। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও কুয়েতসহ বহু মুসলিম দেশ ইতোমধ্যেই তাদের বন্দরে জেডআইএম জাহাজের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।
বাংলাদেশের বন্দরে এই কোম্পানির কার্যক্রম থাকলে তা শুধুমাত্র বাণিজ্যিক নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তথ্যসূত্র: আমার দেশ পত্রিকা
তথ্যসূত্র: আমার দেশ পত্রিকা