ঢাকার রাস্তায় এখন নতুন এক বিজ্ঞাপন মাধ্যমের পদচারণা—মানুষের পিঠে ডিজিটাল স্ক্রিন। শহরের বিভিন্ন ব্যস্ত মোড়ে সন্ধ্যা নামলেই দেখা যায় সারিবদ্ধ তরুণদের দল, প্রত্যেকের পিঠে ঝোলানো উজ্জ্বল ডিসপ্লে, যেখানে ভেসে ওঠে পণ্য, ব্র্যান্ড ও ইভেন্টের প্রচারণা। ‘স্মার্ট স্ক্রিন ডিজিটাল’ নামের এই উদ্ভাবনী উদ্যোগটি বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন জগতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা নেওয়াজ আকবর হোসাইন জানান, দুবাইয়ে হিউম্যান বিলবোর্ড দেখে তার মাথায় আসে ধারণাটি। সেখান থেকে প্রায় এক বছর গবেষণা ও নিজস্ব প্রযুক্তি উন্নয়নের পর এ বছরের শুরুতে শুরু হয় “স্মার্ট স্ক্রিন ডিজিটাল”-এর কার্যক্রম। এখন প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের ব্যস্ততম এলাকায় দলগুলো ঘুরে ঘুরে বিজ্ঞাপন প্রচার করে—গুলশান, বনানী, তেজগাঁও থেকে শুরু করে ধানমন্ডি ও সীমান্ত স্কয়ার পর্যন্ত।
এই চলমান বিজ্ঞাপনগুলো সাধারণ বিলবোর্ডের তুলনায় অনেক বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করে, কারণ এগুলো স্থির নয়, চলমান। বিজ্ঞাপনদাতারা চাইলে ‘শেয়ারড’ বা ‘ডেডিকেটেড’ স্ক্রিন সেবা নিতে পারেন, যার খরচ এক সপ্তাহের জন্য প্রায় ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু। প্রতিষ্ঠানের দাবি, তাদের মোবাইল স্ক্রিন সার্ভিস প্রচলিত বিলবোর্ডের তুলনায় অর্ধেক খরচে অন্তত তিনগুণ বেশি ভিজিবিলিটি দেয়।
বর্তমানে “স্মার্ট স্ক্রিন ডিজিটাল”-এর হাতে রয়েছে প্রায় ৩০টি ব্যাকপ্যাক স্ক্রিন, যা নিজেদের প্রযুক্তিতেই তৈরি। প্রতিটি স্ক্রিনে রয়েছে শক্তিশালী ব্যাটারি, ইন্টারনেট সংযোগ ও ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। টিম লিডারদের তত্ত্বাবধানে তরুণ কর্মীরা কেবল বিজ্ঞাপন প্রদর্শনই করেন না, বরং পথচারীদের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে পণ্যের তথ্যও জানান—যা ‘ওয়ার্ড অফ মাউথ’ মার্কেটিং হিসেবে অতিরিক্ত প্রভাব তৈরি করে।
সেলস ও মার্কেটিং বিভাগের দায়িত্বে থাকা ঐশিকা জয়া জানান, “প্রতিমাসেই নতুন ক্লায়েন্ট যুক্ত হচ্ছে। অনেকেই নিজের ব্র্যান্ডকে আলাদা ভাবে তুলে ধরতে চান, আর আমরা সেটাই দিচ্ছি—একটি চলমান, আলো ছড়ানো বিজ্ঞাপনের অভিজ্ঞতা।”
বর্তমানে তাদের ক্লায়েন্ট তালিকায় রয়েছে পাঠাও, চরকি, ও বেশ কিছু স্থানীয় ব্র্যান্ড। টিম লিডার মোহাম্মদ বিল্লাল জানান, “মানুষ এখন থেমে তাকায়, জানতে চায়, ভিডিও করে। এই আগ্রহই আমাদের সাফল্যের ইঙ্গিত।”
‘স্মার্ট স্ক্রিন ডিজিটাল’-এর অফিস ঢাকার তেজগাঁও নাবিস্কো রোডে। প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজ ও মাঠ পর্যায়ের দলগুলোর মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে।