রাবি রাকসু নির্বাচনে চরম উত্তাপ: প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিতে বিভ্রান্ত ভোটাররা

আপলোড সময় : ১৩-১০-২০২৫ ০৩:৩৮:৩৮ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৩-১০-২০২৫ ০৩:৩৮:৩৮ পূর্বাহ্ন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আসন্ন কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাস এখন নির্বাচনি উত্তাপে সরব। প্রার্থী ও ভোটারদের পদচারণা, লিফলেট আর স্লোগানে মুখর শিক্ষাঙ্গন। আগামী ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই নির্বাচনে দীর্ঘ দুই যুগ পর ভোটের আমেজ ফিরে এসেছে রাবিতে। প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি, যার অনেকটাই রাকসুর গঠনতন্ত্রের বাইরে চলে গেছে— এতে ভোটারদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি ও কৌতূহল।
 

প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এক হল-থেকে-অন্য হলে ছুটছেন, হাতে লিফলেট ও ইশতেহার। কাজলা, মেহেরচণ্ডী, ভদ্রা ও বিনোদপুর এলাকাও তাদের প্রচারণায় জমজমাট। তবে দলীয় প্রার্থীরা যেখানে সমন্বিতভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন, সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পড়েছেন কঠিন পরিস্থিতিতে— সীমিত জনবল নিয়ে তারা একাই চেষ্টা করছেন প্রতিটি ভোটারের কাছে পৌঁছাতে।
 

সৈয়দ আমীর আলী হলের শিক্ষার্থী প্রণব কুমার সাহা বলেন, তিনি নির্বাচনের জোয়ারে পড়ালেখায় মনোসংযোগে বিঘ্ন পেলেও উৎসবমুখর পরিবেশ উপভোগ করছেন। ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’-এর ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর জানান, তারা রাত্রিবেলা পর্যন্ত ক্যাম্পাস ও শিক্ষার্থী আবাসে প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং আচরণবিধি মেনে শেষ সময় পর্যন্ত প্রচার অব্যাহত রাখবেন। অন্যদিকে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’-এর প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, তারা দলভিত্তিক ভাগ হয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন এবং ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন।
 

ইশতেহারে প্রতিশ্রুতির আকর্ষণ এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। শিবির সমর্থিত প্যানেল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সম্প্রসারণ, চিকিৎসাকেন্দ্র উন্নয়ন ও নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের। অন্যদিকে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল বলছে, তারা সেশনজট নিরসন ও নতুন হল নির্মাণের উদ্যোগ নেবে। বামপন্থি ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ গবেষণায় অগ্রাধিকার, আবাসন সংকট নিরসন ও নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
 

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, রাকসুর বর্তমান গঠনতন্ত্র মূলত সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রমের ওপরই সীমাবদ্ধ। ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজা বলেন, প্রশাসনিক বা অবকাঠামোগত পরিবর্তনের ঘোষণা বাস্তবায়নযোগ্য নয়, কারণ রাকসু ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তহবিল এক নয়।
 

নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো। প্রায় ২৯ হাজার ভোটারের মধ্যে ৬৮ শতাংশই হলের বাইরে থাকেন। বড় সংগঠনগুলোর পক্ষে এই শিক্ষার্থীদের কাছে প্রচার পরিচালনা সহজ হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য তা কঠিন হচ্ছে। স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী মোহাম্মদ মুসা বলেন, কর্মীসংখ্যা কম থাকায় মেসে মেসে গিয়ে প্রচার চালাতে সময় লাগছে। প্রথম নারী ভিপি প্রার্থী তাসিন খান জানান, সীমিত সম্পদে শহরের বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
 

রাবির এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা যেন ভোটের উৎসবকে উপভোগ করছেন, তবে প্রতিশ্রুতির বাস্তবতা নিয়ে তাদের মনে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে— নির্বাচনের পর কোন ইশতেহার বাস্তবে রূপ নেবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

সম্পাদকীয় :

লাইসেন্স নং: TRAD/DNCC/013106/2024 বার্তা বিভাগ: [email protected] অফিস: [email protected]

অফিস :

যোগাযোগ: মিরপুর, শেওড়াপাড়া হটলাইন: 09638001009 চাকুরী: [email protected]