
ইসলামী শরিয়তের আমলসমূহ প্রধানত দুই শ্রেণিতে বিভক্ত—একটি হলো আল্লাহর হক সম্পর্কিত এবং অপরটি মানুষের বা বান্দার হক। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) যে কাজগুলো ফরজ করেছেন, সেগুলো আল্লাহর হকের অন্তর্ভুক্ত, এবং যে কাজগুলো হারাম বা নিষিদ্ধ, সেগুলো পরকালের শাস্তি সহ প্রযোজ্য। তবে অধিকাংশ নৈতিক ও সামাজিক নির্দেশনা মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা মানবতার অধিকার ও কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেয়।
ইসলামের মূল ভিত্তি হিসেবে পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে শাহাদাত, সালাত, সিয়াম, হজ্জ ও জাকাত আল্লাহর হকের অন্তর্ভুক্ত। তবে জাকাত প্রদান করা মানে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি নয়, এটি মানুষের সঙ্গে সদাচরণেরও অংশ। এছাড়া জীবন ও সমাজের অন্যান্য অংশে মানুষের সঙ্গে ন্যায়পরায়ণ আচরণ, সহমর্মিতা ও সদাচারই প্রকৃত মুসলিমের বৈশিষ্ট্য।
রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বোত্তম মুসলিমের চরিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, সর্বোত্তম মুসলিম সেই ব্যক্তি যার স্বভাব ও চরিত্র উত্তম এবং যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্যরা নিরাপদ থাকে। এছাড়া ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপরিচিত সবার সঙ্গে সালাম বিনিময় করা মুসলিমের শ্রেষ্ঠ নৈতিক দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য।
ইসলাম ধ্বংসকারী সাতটি গুনাহ থেকে দূরে থাকতে শিক্ষা দিয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশ মানুষের হকের লঙ্ঘন সম্পর্কিত—যেমন: অন্যায় হত্যা, এতিমের মাল আত্মসাৎ, সুদ খাওয়া, জাদু করা, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন এবং নির্দোষ নারীর বিরুদ্ধে অপবাদ।
মানুষের সাথে সদাচার ও ন্যায়পরায়ণতা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন নির্দেশ। আত্মীয়, প্রতিবেশী, এতিম, মিসকিন, পথচারী ও দাসদাসীর প্রতি সদ্ব্যবহার ইসলাম সজ্ঞানে প্রবর্তিত করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যিনি এতিমের দেখাশোনা করেন, তিনি জান্নাতে তাঁর সঙ্গে একত্রে থাকবেন। বিধবা ও মিসকিনদের দেখাশোনা করা আল্লাহর পথে জিহাদের সমতুল্য।
ইসলামে অন্যায়ের ফল ভয়ঙ্কর। উদাহরণস্বরূপ, কারো জমি জুলুম করে আত্মসাৎ করলে কিয়ামতের দিনে সেই জমি তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। মিথ্যা বলা, চুরি, গীবত, অপবাদ, ঘুস, হিংসা ও যিনা—সবই মানুষের হক লঙ্ঘন। ফলে প্রকৃত মুসলিম হওয়ার জন্য আল্লাহর হক আদায় করার পাশাপাশি মানুষের সকল হক রক্ষায় সচেষ্ট থাকা অপরিহার্য।
ইসলামে আল্লাহর হক ও মানুষের হক মিলিয়ে চলা জীবনকেই সর্বোত্তম জীবন বলা হয়। এই সমন্বিত নৈতিকতা মানবকল্যাণ, সামাজিক শান্তি ও ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের মূল ভিত্তি।