পিরোজপুর-২ আসনে স্বরূপকাঠি দখলের লড়াই: কোন্দলে ভাঙা বিএনপি, সুবিধায় জামায়াতের শামিম সাঈদী

আপলোড সময় : ১০-১০-২০২৫ ০৪:০৬:১৮ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১০-১০-২০২৫ ০৪:০৬:১৮ অপরাহ্ন
 

পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া–কাউখালী–স্বরূপকাঠি) আসনের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে। এই আসনের সবচেয়ে বেশি ভোটারের বাস স্বরূপকাঠিতে, যা বাকি দুই উপজেলার মোট ভোটের প্রায় সমান। এমন গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলে একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন জামায়াত ইসলামী মনোনীত শামিম সাঈদী—মরহুম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে। টানা কয়েক মাস ধরে তিনি প্রচার–প্রচারণায় ব্যস্ত, বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, সভা–সমাবেশ করছেন এবং সংগঠনকে নিচের স্তর পর্যন্ত শক্ত করছেন।
 

অন্যদিকে স্বরূপকাঠিতে বিএনপির পরিস্থিতি উল্টো। দীর্ঘদিনের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিংয়ে দলটি কার্যত পাঁচভাগে বিভক্ত। স্বরূপকাঠির তিনজন এবং ভাণ্ডারিয়ার আরও দুজন মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে আছেন, প্রত্যেকেরই নিজস্ব বলয় ও অনুসারী রয়েছে। এ বিভক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অনেক জায়গায় একে অপরের সঙ্গে কথা বন্ধ। দলীয় ঐক্যহীনতায় স্বরূপকাঠির ভোটে ভর করতে গিয়ে বিএনপি উল্টো ক্ষতির মুখে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কা স্থানীয় পর্যায়ে জোরালো হচ্ছে।
 

১৯৯০–পরবর্তী কোনো সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি জয় পায়নি। একমাত্র ২০০৮ সালে স্বরূপকাঠির শাহ আলম নির্বাচিত হয়েছিলেন ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে। বাকিগুলোয় জয় পেয়েছেন ভাণ্ডারিয়ার রাজনীতিকরা—বিশেষ করে জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও সাম্প্রতিক নির্বাচনে মহারাজ। তবু এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আবারও স্বরূপকাঠি, যেখানে চলছে বিএনপি ও জামায়াতের ‘নীরব প্রতিদ্বন্দ্বিতা’।
 

স্বরূপকাঠি বিএনপির পুরোনো দুই শীর্ষ নেতা—ওয়াহিদুজ্জামান ও ফখরুল আলম—দুজনের বিরুদ্ধেই ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ থাকার অভিযোগ আছে। এই দ্বন্দ্বের ফাঁকে নতুন বলয় তৈরি করেছেন সাবেক সদস্য সচিব আলবেরুনী সৈকত। সাম্প্রতিক সময়ে তাকে ঘিরে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে। এমন জটিল পরিস্থিতিতে ভাণ্ডারিয়ার ভিপি মাহমুদ হোসাইন ও সুমন মঞ্জুরও মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে নেমেছেন। ভিপি মাহমুদ ইতোমধ্যে এলাকায় নৌ র‌্যালি, পূজামণ্ডপে অনুদান ও জনসংযোগের মাধ্যমে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন।
 

বিএনপি–সংশ্লিষ্টদের মতে, এই পাঁচ গ্রুপে বিভক্তি জামায়াতকে সুযোগ করে দিয়েছে। তারা বলছেন, জামায়াত ইতোমধ্যেই ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সক্রিয় সংগঠন গড়ে তুলেছে, যা বিএনপির জন্য উদ্বেগের কারণ।
 

বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ওয়াহিদুজ্জামান মনে করেন, “মনোনয়ন শুধুই বেশি ভোটের এলাকায় দেওয়া উচিত নয়; দেখতে হবে প্রার্থীর মাঠের জনপ্রিয়তা ও দলের সঙ্গে সম্পর্ক কতটা গভীর।” অন্যদিকে কাউখালীর নেতা আহসান কবির বলেন, “তিন উপজেলায় যিনি সমানভাবে গ্রহণযোগ্য, তাকেই প্রার্থী করা দরকার।”
 

জামায়াতের স্বরূপকাঠি উপজেলা আমির মাওলানা আবুল কালাম আজাদ অবশ্য আত্মবিশ্বাসী—“মানুষ এখন দল নয়, ব্যক্তি দেখে ভোট দেয়। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে হওয়ায় শামিম সাঈদী স্বাভাবিকভাবেই জনভোটে এগিয়ে।”
 

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত বিএনপি এখন মনোনয়ন নিয়ে অপেক্ষায়, আর সেই ফাঁকে মাঠে সুবিধা নিচ্ছে জামায়াত। আগামী নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসনে এই দ্বন্দ্বের ফলাফলই হয়তো নির্ধারণ করবে—ভোট যাবে ধানের শীষে নাকি মশালে।

সম্পাদকীয় :

লাইসেন্স নং: TRAD/DNCC/013106/2024 বার্তা বিভাগ: [email protected] অফিস: [email protected]

অফিস :

যোগাযোগ: মিরপুর, শেওড়াপাড়া হটলাইন: 09638001009 চাকুরী: [email protected]