মাত্র ২৬ দিনে পদত্যাগ: ফরাসি রাজনীতিতে নেতৃত্বহীনতার নতুন সংকেত

আপলোড সময় : ০৬-১০-২০২৫ ০৬:৫২:৩৩ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৬-১০-২০২৫ ০৬:৫২:৩৩ অপরাহ্ন

ফরাসি রাজনীতিতে আবারও বড় ধাক্কা এসেছে। মাত্র ২৬ দিন দায়িত্ব পালনের পর প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু হঠাৎ করেই সোমবার পদত্যাগ করেছেন। নিজের মন্ত্রিসভা ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই এই পদত্যাগের ঘোষণা, যা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়—বরং প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর প্রশাসনে চলমান অস্থিরতারও প্রতিচ্ছবি।
 

২০১৭ সালে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতায় আসা ম্যাক্রো এখন রাজনৈতিকভাবে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। গত দুই বছরে ফ্রান্সে পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী বদল হয়েছে, কিন্তু কোনো জোটই টিকেনি, বাস্তবায়িত হয়নি ঘোষিত নীতিমালাগুলো। মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক চাপ, ও সরকার পরিচালনায় অদক্ষতা—সব মিলিয়ে সাধারণ ফরাসি নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও ক্লান্তি ছড়িয়ে পড়েছে।
 

লেকর্নু দায়িত্ব নেওয়ার সময় সংস্কারের বার্তা দিয়েছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আর কখনও সংবিধানের ৪৯.৩ ধারা ব্যবহার করে ভোট ছাড়াই আইন পাস করবেন না। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর ঘোষিত মন্ত্রিসভা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ডান ও বাম, উভয় রাজনৈতিক দিক থেকেই আসতে থাকে চাপ, কারণ নতুন মন্ত্রিসভায় ম্যাক্রোর রেনেসাঁ পার্টির প্রভাব ছিল প্রবল—১৫ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১০ জনই তাঁর ঘনিষ্ঠ।
 

এই পরিস্থিতিতে বিরোধীরা সরকারের ওপর সরাসরি আক্রমণ চালায়। বামপন্থীরা একে ‘লোকদেখানো সংস্কার’ বলে উল্লেখ করেছে, আর ফার-রাইট নেতা জর্ডান বারডেলা বলেছেন, “এটা ছিল নাটকের শেষ দৃশ্য।” ন্যাশনাল র‍্যালি পার্টির নেতা মারিন লে পেন মন্তব্য করেছেন, “ম্যাক্রোবাদ এখন রসিকতায় পরিণত হয়েছে।”
 

অর্থনৈতিক দিক থেকেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লা মায়েরকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেওয়ায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কোভিড সময়ের বাজেট ঘাটতির দায় বহন করা ব্যক্তিকে জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে বসানোয় প্রশ্ন উঠেছে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েও। বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে—সোমবার প্যারিস স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ১.৭ শতাংশ পতন ঘটে।
 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোর সামনে তিনটি বিকল্প খোলা—সংসদ বিলুপ্ত করে নতুন নির্বাচন ডাকতে পারেন, নিজেই পদত্যাগ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করতে পারেন, অথবা বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণে নতুন একটি জোট সরকার গঠনের চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো দলই আপস করতে চায় না, ফলে ফ্রান্স এখন কার্যত এক রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে।
 

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অনিশ্চয়তার মুহূর্তে লেকর্নুর পদত্যাগ শুধু ব্যক্তিগত ব্যর্থতা নয়—এটি ফ্রান্সের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রতীক, যা দেশটিকে নেতৃত্বহীন ও বিভক্ত অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।

সম্পাদকীয় :

লাইসেন্স নং: TRAD/DNCC/013106/2024 বার্তা বিভাগ: [email protected] অফিস: [email protected]

অফিস :

যোগাযোগ: মিরপুর, শেওড়াপাড়া হটলাইন: 09638001009 চাকুরী: [email protected]