
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল তিন দিনের সরকারি সফরে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেছে। রোববার রাতে কুয়ালালামপুরে অবতরণ করা এই ফ্লাইটে উপস্থিত ছিলেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী। মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক উচ্চবর্গ পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানানো হয় এবং গার্ড অব অনার দেওয়া হয়েছে।
সোমবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম পুত্রজায়ার পারদানা কমপ্লেক্সে শেখার পাশাপাশি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, হালাল শিল্প, শিক্ষা, পর্যটন ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হবে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতেও মতবিনিময় করা হবে।
দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক ও একটি প্রশিক্ষণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে, যা পর্যটন, উচ্চশিক্ষা, হালাল সার্টিফিকেশন, দুর্নীতি দমন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কূটনীতিক প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করবে। শাহবাজ শরিফ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর হাতে উর্দু ভাষায় অনূদিত ‘স্ক্রিপ্ট: ফর এ বেটার মালয়েশিয়া’ নামক গ্রন্থের একটি কপিও হস্তান্তর করবেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে একটি নৈশভোজের আয়োজন থাকবে।
এ সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পাকিস্তান-মালয়েশিয়া ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে।
মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক ১৯৫৭ সালে শুরু হলেও ২০১৯ সালে তা কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হয়। ২০২৪ সালে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৮.০৭ বিলিয়ন রিঙ্গিত (প্রায় ১.৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫.৫ শতাংশ বেশি। মালয়েশিয়া পামতেল, পেট্রোলিয়াম ও রাসায়নিক পণ্য সরবরাহ করে, আর পাকিস্তান থেকে আমদানি হয় কৃষিপণ্য, টেক্সটাইল, পোশাক, জুতা ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য।
দুই দেশের সম্পর্ক কেবল বাণিজ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আঞ্চলিক রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। উভয়ই ওআইসির সক্রিয় সদস্য এবং মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমমনা অবস্থান নেয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কৌশলগত অবস্থানে মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্থানের এই সম্পর্ক আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধকে নতুন মাত্রা দিতে পারে।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) ও পাকিস্তানের করিডর প্রকল্প (সিপিইসি) মালয়েশিয়ার সাথে সংযোগ হলে ভবিষ্যতে একটি অর্থনৈতিক করিডর গড়ে উঠে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে দুই দেশের প্রবেশাধিকার বাড়াবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এই সফর দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতা জোরদার করবে। পাশাপাশি ইসলামিক অর্থনীতি, হালাল শিল্প এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ সম্পর্ককে কৌশলগত উচ্চতায় নিয়ে যাবে।