
জীবনসঙ্গী নির্বাচন মানুষের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এটি কেবল ব্যক্তিগত পছন্দ বা পার্থিব সম্পর্ক নয়, বরং আধ্যাত্মিক ও সামাজিক দায়িত্বের একটি অংশ। ইসলাম এই সম্পর্ককে সর্বোচ্চ মর্যাদায় দেখেছে—যেখানে বিবাহকে ভালোবাসা, দয়া ও প্রশান্তির এক ঐশ্বরিক বন্ধন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই জীবনসঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও, এবং তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন।” (সুরা রূম, আয়াত ২১)
এই আয়াত দাম্পত্যকে শুধু সামাজিক চুক্তি হিসেবে নয়, বরং আল্লাহর এক নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরে, যেখানে পরস্পরের মাঝে স্নেহ, দয়া ও প্রশান্তির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
নবী করিম (সা.) একটি হাদিসে জীবনসঙ্গী বাছাইয়ের চারটি কারণ উল্লেখ করেছেন—সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, সৌন্দর্য এবং ধর্মপরায়ণতা। এরপর তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, “ধর্মপরায়ণ জীবনসঙ্গীকেই বেছে নাও, তাতেই তোমার কল্যাণ।” (বুখারি ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬)
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে তাই দাম্পত্য জীবনের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত নৈতিকতা ও তাকওয়া। কারণ সম্পদ, রূপ বা মর্যাদা সময়ের সঙ্গে ম্লান হয়, কিন্তু আল্লাহভীতি ও নৈতিকতা সংসারকে টিকিয়ে রাখে দীর্ঘকাল।
ইমাম গাজ্জালি (রহ.) তার ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন গ্রন্থে বলেছেন, একজন আদর্শ জীবনসঙ্গী এমন হওয়া উচিত—যিনি চরিত্রে নির্মল, স্বভাবে নম্র এবং আল্লাহভীরু। বিবাহ কেবল জৈবিক বা সামাজিক বন্ধন নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক যাত্রা, যেখানে দুইজন মানুষ একে অপরকে জান্নাতের পথে সহযাত্রী হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যায়।
ইসলামের শিক্ষা হলো—জীবনসঙ্গী নির্বাচন মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভিত্তি স্থাপন। তাই নির্বাচন হোক এমন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে, যিনি শুধু ঘরের সঙ্গী নন, বরং আত্মার প্রশান্তি ও নৈতিকতার প্রতীক।
দাম্পত্য জীবন তাই কেবল একসাথে থাকা নয়, বরং তাকওয়া, দয়া ও ভালোবাসায় গড়া এক দীর্ঘ যাত্রা—যেখানে ইসলাম আমাদের পথনির্দেশ দিয়েছে শান্তি ও সাফল্যের রূপরেখা।