ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা: গাজার যুদ্ধবিরতির নতুন রূপরেখা

আপলোড সময় : ৩০-০৯-২০২৫ ০৭:২৬:৩৯ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ৩০-০৯-২০২৫ ০৭:২৬:৩৯ পূর্বাহ্ন

মার্কিন নেতৃত্বে প্রণীত একটি ২০ দফা কাঠামো হোয়াইট হাউস থেকে উপস্থাপন করে দেয়া হয়েছে যাতে গাজায় অবিলম্বে সংঘাতবিরতি, পুরো অঞ্চলকে সন্ত্রাসমুক্ত করা, গ্র্যান্ড রিকনস্ট্রাকশন এবং নিরস্ত্রীকরণ-ভিত্তিক একটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক রূপান্তরধারা রাখা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্ল্যানটি ঘোষণা করার সময় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু উপস্থিত ছিলেন; তবে হামাস এখনো আনুষ্ঠানিক সম্মতি দেয়নি। ট্রাম্প জানিয়েছেন, হামাস যদি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তবু যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতিটি পদক্ষেপকে সমর্থন করবে।

প্রস্তাবের মূল ধারা অনুযায়ী, গাজা অঞ্চলকে ক্রমশ সন্ত্রাস ও উগ্রবাদমুক্ত করে স্থানীয় মানুষের জীবনমান রক্ষায় অবকাঠামো পুনরুদ্ধার করা হবে। যদি সব পক্ষ সম্মত হয়, তৎক্ষণাৎ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে—সামরিক কর্মকাণ্ড স্থগিত থাকবে এবং ইসরাইলি বাহিনী বন্দি বিনিময়ের তদারকির জন্য নির্দিষ্ট সীমারেখায় সরে যাবে। ঘোষণা অনুযায়ী, সম্মতি নিলেই হামাসকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। সেই সঙ্গে, ইসরায়েল ২৫০ জন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি ছাড়বে এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে আটক থাকা প্রায় ১,৭০০ জন গাজাবাসীকে রিলিজ করবে; এখানে নারী ও শিশুদেরও অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। কোনো ইসরায়েলি জিম্মির মৃতদেহ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বিনিময়ে ১৫ জন মৃত গাজাবাসীর দেহাবশেষ ফেরত দেয়া হবে।

চূড়ান্ত নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির অংশ হিসেবে গাজার সব সামরিক অবকাঠামো — টানেল, অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রসহ—ধ্বংস করা হবে এবং ভবিষ্যতে তা পুনর্নির্মাণ নিষিদ্ধ থাকবে। নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের নজরদারিতে সম্পন্ন হবে এবং অস্ত্র উদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক অর্থায়নে ‘বাই ব্যাক অ্যান্ড রিইন্টিগ্রেশন’ কর্মসূচি চালু রাখার কথাও বলা হয়েছে। একই সঙ্গে গাজার প্রশাসন সাময়িকভাবে একটি টেকনোক্র্যাটিক, রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ ‘ট্রানজিশনাল কমিটি’ পরিচালনা করবে, যাতে প্রশিক্ষিত ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় দৈনন্দিন পরিষেবা ও পৌর প্রশাসন দেখভাল করবেন। এই আস্থাপত্র ও পুনর্গঠনের তৎপরতা দেখাশোনার জন্য একটি নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা — ‘বোর্ড অব পিস’—গঠন করা হবে; ঘোষণায় বলা হয়েছে এর প্রধান হিসেবে ট্রাম্প ও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নাম রয়েছে এবং অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে।

তখনকার শর্ত অনুসারে গাজার পূর্ণ পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনাবিল মানবিক সহায়তা পাঠানো হবে; ত্রাণ বিতরণ আন্তর্জাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে ও সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে করা হবে। ঘোষিত প্রস্তাবে রাফা ক্রসিং উভয়পাশে খুলে দেয়ার কথাও উল্লেখ ছিল এবং ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ সালের চুক্তির অধীনে উল্লিখিত সহায়তার সমতুল্য ত্রাণ নিশ্চিত করার প্রত্যয়ন দেয়া হয়েছে—যার মধ্যে রয়েছে পানীয় জল, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন, হাসপাতাল ও বেকারিগুলোর পুনর্গঠন, ধ্বংসস্তূপ অপসারণ ও সড়ক খুলে দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির প্রবেশাধিকার।

অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের লক্ষ্য রক্ষার্থে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে যাতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সুবিধা দেওয়া হবে—বিশেষ শুল্ক সুবিধা ও অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকারসহ। মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় গাজার জন্য একটি বিস্তৃত অর্থনৈতিক রূপরেখা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করে কর্মসংস্থান ও সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, গাজা ছাড়া যেতে ইচ্ছুকদের জন্য নিবন্ধিত নিরাপদ গমন ও প্রত্যাবর্তনের স্বাধীনতা থাকবে; কাউকেই জোর করে এলাকার বাইরে ধাক্কা দেওয়া হবে না।

নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থায় উল্লেখ রয়েছে, আন্তর্জাতিক ও আরব অংশীদারদের সহায়তায় গাজার অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য একটি ISF (International Stability Force) গঠন করা হবে, যা স্থানীয় পুলিশ (পিএফ) প্রশিক্ষিত করবে এবং পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও সরবরাহ নিশ্চিত করবে। আইডিএফ (IDF) পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করবে কিন্তু সীমান্তে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী রাখা হতে পারে যাতে পুনরায় সন্ত্রাসী ঝুঁকি সৃষ্টি না হয়।

হোয়াইট হাউস ও প্রস্তাবকারীরা আশা প্রকাশ করেছেন যে গাজার পুনর্গঠন ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে ভবিষ্যতে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রগতি সম্ভব হবে; স্থায়ী শান্তির জন্যও মার্কিন মধ্যস্ততায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বর্ণনা অনুযায়ী আলোচনা শুরু করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ পরিকল্পনা কার্যকর করতে হলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট নীতিগত সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে—যা বাস্তবে প্রয়োগ হলে গাজার শাসন ও সেবায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই উদ্যোগকে নানা প্রতিক্রিয়া मिली: ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক সমর্থন থাকলেও হামাসের অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া, অঞ্চলের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও বাস্তবায়নযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ঘোষিত সময়সীমা ও বাস্তব কার্যকরতার ওপর এখন নজর থাকবে—বিশেষ করে বন্দি মুক্তি, নিরস্ত্রীকরণ এবং ত্রাণবিতরণ কার্যক্রম বাস্তবে কিভাবে পরিচালিত হবে ও কে তাতে তত্ত্বাবধান করবে।

সম্পাদকীয় :

লাইসেন্স নং: TRAD/DNCC/013106/2024 বার্তা বিভাগ: [email protected] অফিস: [email protected]

অফিস :

যোগাযোগ: মিরপুর, শেওড়াপাড়া হটলাইন: 09638001009 চাকুরী: [email protected]