
ভারত নন-বাসমতী চাল রফতানিতে নতুন শর্ত আরোপ করেছে। এখন থেকে এই ধরনের চাল রফতানির প্রতিটি চুক্তি ভারতের কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এপিইডিএ) কাছে নিবন্ধন করতে হবে। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিচালক দফতর (ডিজিএফটি) প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করে।
এর আগে নন-বাসমতী চাল রফতানি ‘মুক্ত’ ক্যাটাগরির আওতায় ছিল। নতুন নীতির ফলে এটি এখন ‘শর্তসাপেক্ষ অনুমোদিত’ পণ্য হিসেবে গণ্য হবে। প্রতি টন চালের জন্য ৮ রুপি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিবছর ভারত ১ কোটি ৬০ লাখ থেকে ১ কোটি ৭০ লাখ টন নন-বাসমতী চাল রফতানি করে থাকে। ফলে নতুন এই ব্যবস্থায় সরকারের রাজস্ব আয় বছরে ১০০ কোটি রুপির বেশি হতে পারে।
ভারতের রফতানিকারক ফেডারেশনের সভাপতি প্রেম গর্গ এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক উল্লেখ করে বলেন, এত দিন কেবল বাসমতী চাল রফতানিতেই নিবন্ধন বাধ্যতামূলক ছিল। এবার নন-বাসমতী চালও একই কাঠামোর আওতায় আসায় রফতানিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে।
বাংলাদেশ ভারতের নন-বাসমতী চালের বড় ক্রেতাদের একটি। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকার ৬ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়, যার সিংহভাগই এসেছিল ভারত থেকে। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ৮ লাখ টন চাল আমদানি করেছে, যা ভারতের মোট রফতানির প্রায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে নীতি পরিবর্তনের কারণে আমদানিতে বিলম্ব বা জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য হলো, এমন এক সময়ে ভারত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন দেশটির সরকারি গুদামে চাল ও গমের মজুত রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। সরকারি তথ্যমতে, ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চালের মজুত ৪৮ দশমিক ২ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। গমের মজুতও ৩৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন টনে দাঁড়িয়েছে—চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ একসময় চাল আমদানির জন্য ভারতের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল থাকলেও এখন অন্যান্য দেশ থেকেও চাল আমদানি করছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ১৩ লাখ টন চাল আমদানি করেছে, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
বিশ্লেষকদের মতে, নন-বাসমতী চাল রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল পণ্য হওয়ায় হঠাৎ নীতি পরিবর্তন বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। যদিও ভারত সরকার বলছে, এই পদক্ষেপ মূলত রফতানিতে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।