
ইউক্রেনে চলমান সামরিক সংঘাতের কারণে দেশটির জনসংখ্যা ব্যাপক হারে কমেছে। ২০১৯ সালে যেখানে ইউক্রেনের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৩৭.৩ মিলিয়ন, সেখানে ২০২৫ সালের মধ্যে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৮.৭ মিলিয়নে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতার সময় ইউক্রেনের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫২ মিলিয়ন, যা থেকে বোঝা যায় যে দীর্ঘমেয়াদী জনসংখ্যা হ্রাসের প্রবণতা চলমান যুদ্ধের ফলে আরও তীব্র হয়েছে। এই পরিসংখ্যানগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, যুদ্ধ কেবল তাৎক্ষণিক মানবিক সংকটই তৈরি করছে না, বরং দেশটির দীর্ঘমেয়াদী জনমিতি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপরও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে।
এই জনসংখ্যা হ্রাসের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে সংঘাতের কারণে সৃষ্ট ব্যাপক অভিবাসন, জন্মহার হ্রাস এবং উচ্চ মৃত্যুর হার। হাজার হাজার মানুষ জীবন বাঁচাতে এবং উন্নত ভবিষ্যতের সন্ধানে ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (UNHCR) তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের প্রথম কয়েক মাসেই লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এর পাশাপাশি, দেশের ভেতরেও বহু মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
জনসংখ্যা হ্রাসের এই প্রবণতা ইউক্রেনের ভবিষ্যতের জন্য গুরুতর চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। কর্মক্ষম জনসংখ্যার অভাব দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করতে পারে, যা যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে আরও কঠিন করে তুলবে। একই সাথে, বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং জন্মহার কম থাকায় জনমিতিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে, যা সামাজিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। এই সংকট মোকাবিলায় ইউক্রেন সরকারকে দ্রুতই কার্যকর নীতি গ্রহণ করতে হবে, যাতে অভিবাসী জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে আনা এবং অভ্যন্তরীণভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করা যায়। তবে, যতদিন সংঘাত চলমান থাকবে, ততদিন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হবে।