
টানা ১২ দিনের যুদ্ধ শেষে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো ইসরাইল এখন মারাত্মক অস্ত্র ও গোলাবারুদের ঘাটতির মুখে পড়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ মঙ্গলবার এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে মার্কিন প্রশাসনের দুজন অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, যুদ্ধ চলাকালীন বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারের কারণে ইসরাইলের অস্ত্রভাণ্ডারে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এছাড়াও আরও তিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানানো হয়, “ইসরাইল বর্তমানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রে ঘাটতি অনুভব করছে।”
জানানো হয়েছে, এই অস্ত্র সংকটের খবর সামনে এল এমন এক সময়ে, যখন ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। কাতারের মধ্যস্থতায় এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে এই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়। যদিও চুক্তির টেকসইতা এখনো নিশ্চিত নয়, তবে ট্রাম্প দাবি করেছেন, দুই দেশই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
ইসরাইল এখনও অস্ত্রঘাটতির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। অথচ প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে। ইরানের হামলার সময়ও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি প্রতিরক্ষা সহায়তা দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৩ জুন ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে গোপন পারমাণবিক কর্মসূচির অভিযোগ তুলে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। পাল্টা জবাবে ইরান “অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩” নাম দিয়ে ইসরাইলের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
এরপর ২২ জুন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করে। উত্তেজনা আরও বেড়ে গেলে ইরান ২৪ জুন কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটি আল উদেইদ-এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের দাবি, হামলার বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথেই প্রতিহত করা হয় এবং এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
যদিও ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির কথা বললেও, ইরান চুক্তির কোনো অস্তিত্ব স্বীকার করেনি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, “ইসরাইল আগ্রাসন শুরু করলে জবাব অবশ্যম্ভাবী।” যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি।
বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের সাবেক সিরিয়া বিষয়ক দূত পিটার ফোর্ড রুশ সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তিকে বলেন, “যুদ্ধবিরতির কিছু লঙ্ঘন হলেও এটি টিকে থাকার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ, ইসরাইলের পক্ষে এখন দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাদের শান্তির প্রয়োজন এখন বেশি।”
সূত্র: এনবিসি নিউজ, রিয়া নভোস্তি, আল জাজিরা, কাতার নিউজ এজেন্সি