
প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ ৭ দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মোট ৯ শিক্ষার্থী। প্রায় ৩০ ঘণ্টা পার হলেও এখনও কোনো সুষ্ঠু সমাধান আসেনি প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমনটা দাবি করছেন অনশনরত শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সামনে এ কর্মসূচি করছেন তারা। যা এখনও চলমান। ইতোমধ্যে অনশনরত দুইজন শিক্ষার্থী খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এর আগে, আহত শিক্ষার্থীদের পূর্ণ তালিকা প্রকাশ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা প্রদান, নিরাপত্তাহীন অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য অবিলম্বে মানসম্মত ভ্রাম্যমাণ আবাসনের ব্যবস্থা করা এবং আবাসনচ্যুত শিক্ষার্থীদের মালামাল উদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা, উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ঘিরে বিশেষভাবে চিহ্নিত শিক্ষার্থীদের সকলপ্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা এবং নিরপরাধ এলাকাবাসীদের হয়রানি বন্ধ করা, বৈপরীত্যমূলক দ্বন্দ্ব–সংঘাত নিরসনে উভয়পক্ষের অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বয় কমিটি গঠন করা এবং ন্যূনতম তিন মাস পরপর মিটিং করা ও সিন্ডিকেট কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের রোডম্যাপ প্রকাশ ও বাস্তবায়ন করাসহ শিক্ষার্থী আহতের ঘটনার দায় নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার ৭ দফা দাবি জানান তারা।
অনশনরত শিক্ষার্থীরা হলেন,বাংলা বিভাগের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্র, মিউজিক বিভাগের ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ঈশা দে, স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রামা সাইন মারমা, ইংরেজি বিভাগের ২০২১–২২ শিক্ষার্থীরা আহমেদ মুগ্ধ ও নাঈম শাহজান, মার্কেটিং বিভাগের ২০২১–২২ শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদার, মিউজিক বিভাগের ২০২০–২১ শিক্ষার্থী জশদ জাকির, বাংলা বিভাগের ২০১৯–২০ শিক্ষার্থী সুদর্শন চাকমা এবং ২০১৮–১৯ শিক্ষার্থী ধ্রুব বড়ুয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম শাহজাহান বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে সাত দফা দাবি দিয়েছিলাম। এ নিয়ে তাদের সাথে আমরা কথা বলতে গেলে আমাদের বিভিন্ন ভাবে বোঝানো হয়। মূলত দাবির কিছুই পূরণ হয়নি। দাবি আদায়ে আমরা আমরণ অনশনে বসেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর দেখা করতে আসে। প্রশাসন যে প্রস্তাবনা দিয়েছে আমাদের মনপুত না হওয়ায় আমরা আমাদের অনশন চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা আমাদের দাবিতে অটল।’
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, শিক্ষার্থীদের অনশনের কথা শুনেই গতকাল আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জি এস হাবিবকে দায়িত্ব দিয়েছি অনশনরত শিক্ষার্থীরা যেন এসে আমার কার্যালয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করে। আমি রাত আটটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও কোনো শিক্ষার্থী আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। অবশেষে আমি বাসায় ফিরে যাই আজকে যখন ক্যাম্পাসে আসি বিভিন্ন কাজ থাকার কারণে ওদের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। আমি যখন শুনেছি শিক্ষার্থীরা এখনো অনশনে তখনই আমি, উপ–উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন, ছাত্র উপদেষ্টা আনোয়ার সাইদসহ প্রায় পাঁচ ছয়জন শিক্ষক ওদের সাথে যোগাযোগ করি। আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনা করার পরেও তাদের অনশন ভাঙাতে পারেনি। বারবার বলেছি আমরা আগামী রবিবার বিকাল তিনটায় তোমাদের সাথে বসে তোমাদের সকল দাবি দাওয়া শুনবো। কিন্তু তারা তাদের কথার উপর অটল আছে। তারা বারবার বলছে প্রক্টরের পদত্যাগ এবং দোষীদের বিচার নিশ্চিত করতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু একটা নিয়ম আছে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তও করেছি। তাহলে আমরা আবার কীভাবে ওদের দাবি অনুযায়ী কাজ করবো? আমাদের তদন্তের রিপোর্টে যদি প্রক্টর দোষী হয় তাহলে অবশ্যই তাকে অপসারণ করা হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেটা মানতেছে না।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা মারা গেলেও অনশন ভাঙবো না। যতক্ষণ না প্রশাসন আমাদের দাবি না মানে।