
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকায় লং মার্চে অংশ নিয়ে নিখোঁজ হন নারায়ণগঞ্জের যুবক সাব্বির হোসেন মুন্না (২৪)। সেই থেকে তার পরিবার চরম অনিশ্চয়তা, শোক ও হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। সন্তান বেঁচে আছেন না কি শহীদ হয়েছেন—জানেন না তার বাবা-মা ও ছোট বোন। গত দশ মাসে মুন্নার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মুন্না নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের সোনাপুর এলাকার বাসিন্দা। বাবা শফিকুল ইসলামের সঙ্গে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন তিনি। পরিবার চালাতে বাবাকে সহায়তা করতেন, আর বোন সুমাইয়ার পড়াশোনার খরচও জোগাতেন। মুন্নার নিখোঁজ হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় সুমাইয়ার পড়াশোনা। গত দুই ঈদেও ওই পরিবারে ছিল না কোনো আনন্দের ছোঁয়া, রান্না হয়নি নতুন কিছু, কেনা হয়নি নতুন পোশাক।
মুন্নার মা মুক্তা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন ছেলের কথা বলতে গিয়ে। তিনি জানান, মুন্না দেশপ্রেমের তাগিদে আন্দোলনে অংশ নেন। ৫ আগস্ট সকালে মাকে না জানিয়ে কেবল বোনকে বলে গণভবনের দিকে লং মার্চে অংশ নিতে কাঁচপুর থেকে রওনা দেন। এরপর থেকে নিখোঁজ।
মুন্নার সহযোদ্ধা হাসান আলী জানান, যাত্রাবাড়ি হানিফ ফ্লাইওভারের কাছে বিকেল ৪টায় মুন্নার সঙ্গে শেষবার দেখা হয়। গুলির মুখেও মুন্না এগিয়ে যান। এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি।
পরিবার সোনারগাঁ থানায় জিডি করে, আড়াইহাজার সেনাবাহিনী ক্যাম্পেও জানায়। কিন্তু আজও তার কোনো হদিস মেলেনি। মুন্নার বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, “লাশটা অন্তত পেলে দাফন করতে পারতাম, মনটাও সান্ত্বনা পেত।”
মুন্নার নাম জেলা প্রশাসনের শহীদ কিংবা আহতদের তালিকায় নেই। পরিবার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, মুন্না কি পড়ে আছেন কোনো হিমাগারে, না কি দাফন হয়েছে অজ্ঞাত গণকবরে?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সদস্য সচিব জাবেদ আলম জানান, সংগঠনটি নিজেরা খোঁজ করেছে, পরিবারকে সহায়তা করছে। তবে এখনও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো অগ্রগতি নেই।
জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। তবে এখন গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদি কেউ মিসিং হয়ে থাকে আমরা অবশ্যই তার জন্য পদক্ষেপ নেবো।”