
ভারত ২০ আগস্ট তাদের মধ্যম-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫ এর সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। ওডিশার বঙ্গোপসাগর উপকূল থেকে পরিচালিত এই পরীক্ষাকে দেশটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতার বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। ১৭ দশমিক ৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং প্রায় ৫০ হাজার কেজি ওজনের অগ্নি-৫ এক হাজার কেজির বেশি পারমাণবিক বা প্রচলিত পেলোড বহনে সক্ষম। এটি ঘণ্টায় প্রায় ৩০ হাজার কিলোমিটার গতিতে ৫ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে, যা বিশ্বের দ্রুততম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরীক্ষার বার্তা মূলত পাকিস্তানের জন্য নয়, বরং চীনের উদ্দেশেই বেশি অর্থবহ। কারণ, অগ্নি-৫ সহজেই চীনের উত্তরাঞ্চলসহ এশিয়ার বিরাট অংশ এবং ইউরোপের কিছু অংশেও আঘাত হানতে পারে। এটি ছিল অগ্নি-৫ এর ১০ম পরীক্ষা, তবে গত বছরের মার্চের পর এটিই প্রথম।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) সম্মেলনে অংশ নিতে চীন সফরের ঠিক আগে এই পরীক্ষা চালানো হয়। দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি উত্তেজনা কমে আসলেও ভারত এখনো চীনকে তার প্রধান নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে। কৌশলবিদদের মতে, ভারতের মধ্যম ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বড় অংশই চীনকে মাথায় রেখেই এগিয়েছে।
অন্যদিকে, ভারতীয় এই উদ্যোগের এক সপ্তাহ আগে পাকিস্তান ঘোষণা দেয় নতুন আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড (এআরএফসি) গঠনের। এর আগে দেশটি ফাতাহ-৪ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করে, যার পাল্লা ৭৫০ কিলোমিটার এবং এটি পারমাণবিক ও প্রচলিত উভয় ধরনের ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। তবুও বিশ্লেষকরা বলেন, পাকিস্তানের হাতে এখনো কার্যকরী দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা পারমাণবিক সাবমেরিন নেই। দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যালিস্টিক মিসাইল শাহীন-৩, যার পাল্লা ২৭৫০ কিলোমিটার।
এদিকে ভারত আরও শক্তিশালী অগ্নি-৬ তৈরি করছে, যার পাল্লা হবে ১০ হাজার কিলোমিটারের বেশি এবং এটি একাধিক স্বাধীনভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এমআইআরভি প্রযুক্তিসম্পন্ন। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র একই সঙ্গে একাধিক পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে এবং আলাদা লক্ষ্যবস্তুতে নিক্ষেপ করতে পারে, যা ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কৌশল ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মনসুর আহমেদ মন্তব্য করেছেন, অগ্নি-৫ এর সর্বশেষ পরীক্ষা ভারতের ক্রমবর্ধমান আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়। তিনি বলেন, এই প্রযুক্তি শুধু ভূমিভিত্তিক ব্যালিস্টিক সিস্টেমই নয়, ভারতের ভবিষ্যৎ সাবমেরিন-নির্ভর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার দিকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি তুলে ধরে।
(সূত্র: আল জাজিরা)