
সুদ যেন এখন একটি অতি সাধারণ একটি বিষয় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আসলেই কি তাই? ইসলাম কি একই কথা বলে নাকি অন্যকিছু? আসুন জেনে নেই কুরআন ও হাদিসের আলোকে সুদের ভয়াবহতা...
সুদ ( রিবা ) গ্রহণ ও প্রদানের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কুরআন ও হাদিসে সুদকে শুধু আর্থিক অন্যায় নয়, বরং আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মহানবী ﷺ সুদগ্রহণ ও প্রদানের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সাহাবাদের সতর্ক করেছেন।
একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবাদের সাথে বসে সতর্ক করে বললেন:
“তোমরা সুদের সামান্যতম অংশ থেকেও দূরে থেকো। কারণ সুদ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করার সমান।”
সাহাবারা ভীত হয়ে প্রশ্ন করলেন,
“ইয়া রাসূলুল্লাহ ﷺ, সুদ খাওয়ার শাস্তি কত ভয়ঙ্কর?”
রাসূলুল্লাহ ﷺ উত্তর দিলেন:
“এক দিরহাম সুদ খাওয়া হলো ছত্রিশবার ব্যভিচার করার সমান। আল্লাহর ধ্বংস ও অভিশাপ তার ওপর নেমে আসে।”
— ইবনে মাজাহ ২২৭৬; মুসনাদ আহমাদ ২/৩৫৩
ইসরা-মিরাজের রাতে মহানবী ﷺ এমন ভয়াবহ দৃশ্যও দেখেছেন:
“আমি একটি নদী দেখলাম, যার পানি ছিল রক্ত। সেই নদীতে কিছু মানুষ সাঁতার কাটছিল। যখনই তারা তীরে আসতে চাইত, একজন তাদের মুখে বড় বড় পাথর ছুড়ে মারত। ফলে তারা আবার নদীর মাঝখানে ফিরে যেত। এইভাবে বারবার চলছিল।”
— সহিহ বুখারি, ৭০৪৭
আরও এক দৃশ্যে মহানবী ﷺ দেখেছেন:
“একদল মানুষ যাদের পেট অত্যন্ত বড়, তারা ফেরাউনের দল দ্বারা পদদলিত হচ্ছে। প্রতিবার ওরা উঠতে চাইলেই আবার পড়ে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? বলা হলো: এরা সেইসব লোক যারা সুদ খেত।”
— সহিহ মুসলিম, ১৫৯
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা সুদ সম্পর্কে বলেন:
“যদি তোমরা তা (সুদ) ছেড়ে না দাও, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধ ঘোষণা শুনে নাও।”
— সূরা আল-বাকারাহ ২:২৭৯
কুরআনে বহুবার সুদের ভয়াবহতা নিয়ে আল্লাহ তা'আলা আয়াত নাযিল করেছেন। এছাড়াও মহানবী ﷺ-এর বাণী ও মিরাজে দেখা দৃশ্যগুলো সুদগ্রহণের ভয়াবহ পরিণতি আমাদের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরে। সুদ শুধু দুনিয়ায় নয়, আখিরাতেও কঠিন শাস্তির কারণ। একজন মু’মিনের উচিত লোভ ও অর্থের মোহ থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং সুদ থেকে বিরত থাকা।
সুদ পরিহার করে ব্যবসা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ন্যায় নিশ্চিত করা এবং দান-সদকার মাধ্যমে সমাজে কল্যাণ স্থাপন করা সম্ভব। এটি ব্যক্তি ও সমাজ উভয়কেই উপকৃত করে।