
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদীতে ক্রমেই ভয়াবহ আকার নিচ্ছে আরাকান আর্মির তৎপরতা। মাত্র চার দিনে ৬টি ট্রলারসহ ৪৪ জন বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের এ বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এ ঘটনায় টেকনাফ উপকূলে বিরাজ করছে চরম উৎকণ্ঠা। জেলে ও ট্রলার মালিকরা দাবি করছেন, নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় টানা অপহরণ-লুটের ঘটনায় নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
ট্রলার মালিক সমিতির তথ্যমতে, শাহপরীর দ্বীপের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় সাগরে মাছ শিকার শেষে ফেরার পথে একের পর এক ট্রলার আটকে দিচ্ছে আরাকান আর্মি। সর্বশেষ ২৬ আগস্ট ওই এলাকা থেকে ২টি ট্রলারসহ ১১ জন জেলেকে ধরে নিয়ে যায় তারা। স্থানীয় প্রশাসনও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, শুধু আগস্ট মাসের প্রথম দিক থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ২২ দিনে ৭টি ট্রলার-নৌকাসহ ৫১ জন জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের এখনো ফিরিয়ে আনা যায়নি। ট্রলার মালিকদের দাবি, স্পিডবোটে করে আরাকান আর্মি বাংলাদেশি জলসীমায় প্রবেশ করছে এবং অস্ত্রের মুখে ট্রলার জব্দ করছে। যদিও বিজিবি’র তৎপরতায় কিছু জেলেকে পূর্বে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছিল, তবুও অপহরণ-লুটের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না।
বিজিবি ও জেলে মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫০ জন জেলে আরাকান আর্মির হাতে আটক হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েক দফায় ১৮৯ জনকে ফেরত আনা গেলেও বর্তমানে অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। এতে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাখাইন রাজ্যে খাদ্য ও পণ্যের সংকট মোকাবিলায় আরাকান আর্মি জেলেদের অপহরণকে অর্থ আদায়ের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম মনে করেন, সীমান্তে আরও কৌশলগত নজরদারি জরুরি। অভিবাসন গবেষক আসিফ মুনীরের মতে, সীমান্তে আধিপত্য বিস্তার ও রোহিঙ্গা ইস্যুকে ঘিরেই এ ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। তিনি বলেন, বিষয়টি সমাধানে বাংলাদেশকে কূটনৈতিকভাবে তাদের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করতে হবে।