ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর কৃত্রিম পুনঃস্থাপনে টেকসই সমাধান কতটা সম্ভব?

আপলোড সময় : ১৯-০৮-২০২৫ ১০:০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৯-০৮-২০২৫ ১০:০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন

সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর একসময় ছিল দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক। কিন্তু অবৈধভাবে দেড় কোটি ঘনফুটের বেশি পাথর লুটের পর এলাকা এখন প্রায় ফাঁকা। প্রশাসনের উদ্যোগে উদ্ধার হওয়া পাথর ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে আগের জায়গায়, তবে এর অগ্রগতি ধীর এবং কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

সোমবার (১৮ আগস্ট) পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া পাথরের পরিমাণ প্রায় চার লাখ ঘনফুট। এর মধ্য থেকে পুনঃস্থাপন করা হয়েছে মাত্র কয়েক হাজার ঘনফুট। এই ধীরগতি নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে, কারণ লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ পাথরের তুলনায় উদ্ধার হওয়া ও পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সামান্য।

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের কৃত্রিম প্রতিস্থাপন প্রকৃতপক্ষে ভোলাগঞ্জকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবে না। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, “পাথর পুনঃস্থাপন নামে নতুন শব্দ এসেছে, কিন্তু বাস্তবে এর টেকসইতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এসব পাথর মাটি বা বালির সঙ্গে মিশে যেতে সময় লাগবে, ফলে স্বাভাবিকভাবে জায়গা নিতে পারবে না। উল্টো মানুষের জন্য নতুন বিপদের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।”

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক কাসমির রেজা বলেন, “ভোলাগঞ্জকে আগের রূপে ফেরাতে প্রকৃতির উপরই নির্ভর করতে হবে। প্রতি বছর ঢলে নতুন পাথর আসে না; কোনো কোনো বছরই আসে। তাই প্রাকৃতিক ঢল ছাড়া কৃত্রিম পুনঃস্থাপনে প্রকৃত সমাধান আসবে না।”

অন্যদিকে প্রশাসনও স্বীকার করছে যে পুনঃস্থাপন একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। জেলা প্রশাসক (ডিসি) শের মাহবুব মুরাদ তার পদ ছাড়ার আগে জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হবে। তার মতে, উদ্ধার করা পাথর রিপ্লেস করা হলেও প্রকৃত রূপ ফিরে আসবে কি না, তা বিশেষজ্ঞ মতামতের উপর নির্ভর করছে।

এদিকে স্থানীয়রা শঙ্কা প্রকাশ করছেন, এই পুনঃস্থাপন উদ্যোগ যেন নতুন করে অর্থ লুটপাটের প্রকল্পে পরিণত না হয়। কারণ ইতোমধ্যেই অবৈধ উত্তোলন ও বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী মহল প্রশাসনিক তৎপরতার সুযোগে ফায়দা নিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর শুধু খনিজ সম্পদ নয়, এটি একটি নৈসর্গিক ঐতিহ্য। এর টেকসই পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এখন প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—প্রকাশ্যে লুটপাটের পর ভোলাগঞ্জ কি আর আগের সৌন্দর্যে ফিরতে পারবে, নাকি এটি চিরতরে হারিয়ে যাবে ইতিহাসের পাতা?

সম্পাদকীয় :

লাইসেন্স নং: TRAD/DNCC/013106/2024 বার্তা বিভাগ: [email protected] অফিস: [email protected]

অফিস :

যোগাযোগ: মিরপুর, শেওড়াপাড়া হটলাইন: 09638001009 চাকুরী: [email protected]