
সিলেটের ভোলাগঞ্জের দৃষ্টিনন্দন সাদাপাথর চুরির ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছিল। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে সংঘটিত এই লুটের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার পর অবশেষে লুট হওয়া পাথর ফেরত আনা হচ্ছে। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) স্থানীয় প্রশাসনের অভিযানে বিভিন্ন ক্রাশার মিল, উঠান এমনকি রান্নাঘর থেকে লুকিয়ে রাখা সাদাপাথর উদ্ধার করা হয়। মাটির নিচে পুঁতে রাখা অংশও ফেরত আনা হয়েছে।
পাথর পাচার ঠেকাতে সেনাবাহিনী সিলেটের সড়কগুলোতে নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। চেকপোস্টে আটক করা হচ্ছে পাথরবোঝাই শত শত ট্রাক এবং চলছে তল্লাশি। এদিকে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক কোম্পানীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা ১,৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন যে হারে পাথর লুট হয়েছিল, ফেরত আসছে তার তুলনায় খুবই অল্প। ফলে পর্যটনকেন্দ্রটি আগের সৌন্দর্য ফিরে পাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর আসলে লাইমস্টোন বা চুনাপাথর। এটি উচ্চ তাপে পুড়িয়ে সিমেন্ট তৈরির মূল কাঁচামাল ক্লিঙ্কার পাওয়া যায়। কিন্তু দিনাজপুরের মধ্যপাড়া থেকে উত্তোলিত পাথর ক্লিঙ্কার উৎপাদনের উপযোগী নয়। ফলে দেশের ক্লিঙ্কারের পুরো চাহিদাই আমদানির ওপর নির্ভরশীল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. বদরুদ্দেজা মিয়া জানান, ভোলাগঞ্জের পাথরের ভাণ্ডার অপ্রতুল। তিনি বলেন, “লাইমস্টোনের গুরুত্ব হলো সিমেন্ট উৎপাদনের সোর্স হিসেবে। তবে এখানে যা পাওয়া যাচ্ছে, তা আমাদের চাহিদার তুলনায় সামান্য।”
নির্মাণ প্রকৌশলী মো. এ বি সিদ্দিকের মতে, ভোলাগঞ্জের সাদাপাথরের বড় বাণিজ্যিক ব্যবহার নেই। তিনি বলেন, “ক্লিঙ্কার আমরা বিদেশ থেকে আমদানি করি। ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন শিল্পের জন্য অনেক বেশি মূল্যবান। এর বিক্রয়মূল্যের তুলনায় পর্যটন খাত থেকেই বেশি রাজস্ব আয় সম্ভব।”
তিনি আরও পরামর্শ দেন, ভবিষ্যতে যদি পাথর উত্তোলনের প্রয়োজন হয়, তবে তা অবশ্যই বৈজ্ঞানিক ও পরিবেশসম্মত পদ্ধতিতে হওয়া উচিত।