জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫: সংস্কার প্রস্তাবের খসড়া প্রকাশ

আপলোড সময় : ১৭-০৮-২০২৫ ০২:৫১:২০ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৭-০৮-২০২৫ ০৩:১৫:৫৬ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে “জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫”–এর খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন–সংক্রান্ত সংস্কারের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী, দীর্ঘ আলোচনার পর বেশিরভাগ বিষয়ে ঐকমত্য হলেও কিছু প্রস্তাবে এখনো দ্বিমত রয়েছে। --- পটভূমি: ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের রাষ্ট্র কাঠামোর স্বপ্ন দেখা হয়েছিল, তা ৫৩ বছরেও পূর্ণ হয়নি। একচ্ছত্র ক্ষমতা ও অপব্যবহারের কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধান সংশোধন, নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের দলীয়করণ এবং দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে জনঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। --- প্রধান প্রস্তাবসমূহ- নাগরিকত্ব ও সংবিধান: নাগরিক পরিচয় হবে “বাংলাদেশি”। সংবিধান সংশোধনে দুই কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংশোধনে গণভোট বাধ্যতামূলক। জরুরি অবস্থা ঘোষণায় মন্ত্রিসভার অনুমোদন এবং বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতার উপস্থিতি। জরুরি অবস্থায় জীবনের অধিকার ও ন্যায়বিচারের অধিকার খর্ব করা যাবে না। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও মৌলিক অধিকার মূলনীতিতে যুক্ত হবে: সাম্য, মর্যাদা, সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া হবে বহুজাতি, বহু-ধর্মী, বহু-ভাষী ও বহু-সংস্কৃতির দেশ হিসেবে। মৌলিক অধিকারের তালিকা হালনাগাদ ও সম্প্রসারণ। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী: রাষ্ট্রপতি সংসদের দুই কক্ষের ভোটে নির্বাচিত হবেন। রাষ্ট্রপতি কোনো রাজনৈতিক বা সরকারি পদে থাকতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়বে— স্বতন্ত্রভাবে গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগের ক্ষমতা পাবেন। প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদ নির্ধারণ। প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে দলীয় প্রধান হতে পারবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার: নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল। সংসদ ভেঙে গেলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ের জন্য স্পিকার-নেতা-প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেতাদের সমন্বয়ে বাছাই কমিটি। সর্বোচ্চ ৯০ দিন মেয়াদ; প্রয়োজনে আরও ৩০ দিন বাড়ানো যাবে। আইনসভা: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ— জাতীয় সংসদ ও ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ (সিনেট)। উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচিত হবেন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে। সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব ধাপে ধাপে ১০০ আসনে উন্নীত হবে। দলগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে ন্যূনতম ৫% নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে, যা ধাপে ধাপে ৩৩% পর্যন্ত বাড়ানো হবে। বিচার বিভাগ: জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাবেন। স্বাধীন বিচারক নিয়োগ কমিশন (JAC) গঠন হবে। প্রতিটি বিভাগে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ থাকবে। বিচারক ও আদালতকর্মীদের সম্পদ বিবরণী প্রতি তিন বছর অন্তর প্রকাশ বাধ্যতামূলক। আইনজীবীদের আচরণবিধি হালনাগাদ, আদালত প্রাঙ্গণে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। নির্বাচন ব্যবস্থা: নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা ও বিচারপতির সমন্বয়ে বাছাই কমিটি। কমিশনারদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার যাচাই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দায়িত্বও নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর। দুর্নীতি দমন: জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন। বৈধ উৎসবিহীন আয় বৈধ করার প্রথা বন্ধে আইন প্রণয়ন। কোম্পানি ও ফাউন্ডেশনের প্রকৃত মালিকানা জনসমক্ষে প্রকাশ বাধ্যতামূলক। রাজনৈতিক অর্থায়নে স্বচ্ছতা আনতে আয়-ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ ও যাচাই ব্যবস্থা। সরকারি সেবা খাতের পূর্ণ অটোমেশন। বেসরকারি খাতে ঘুষকেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। --- সারসংক্ষেপ: “জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫”–এর খসড়ায় স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা, নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার কঠোরতা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আশা, রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা শেষে এই সনদ চূড়ান্ত রূপ পাবে এবং দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের ভিত্তি হবে।

সম্পাদকীয় :

লাইসেন্স নং: TRAD/DNCC/013106/2024 বার্তা বিভাগ: [email protected] অফিস: [email protected]

অফিস :

যোগাযোগ: মিরপুর, শেওড়াপাড়া হটলাইন: 09638001009 চাকুরী: [email protected]