
বাংলাদেশের শিল্প খাত চলতি অর্থবছরে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ায় উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি ও এলসি খোলা হার দুটোই গত অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্প ছাড়া অন্যান্য খাতের কাঁচামাল আমদানি কমেছে, যা শিল্পের সার্বিক উৎপাদন ও বেসরকারি খাতের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলেছে।
২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর শিল্প খাতে মন্দা প্রকট হতে থাকে। করোনার প্রভাব কাটিয়ে ওঠার আগেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়। দেশীয় ডলার সংকট ও ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে শিল্প খাতে অনিশ্চয়তা আরও বেড়ে যায়।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত নয়। উদ্যোক্তারা ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট ও ঋণের সীমিত সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট ও ঋণের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে শিল্প বিনিয়োগে প্রভাব পড়েছে। চলতি অর্থবছরে সুদের হার ১২ থেকে ১৮ শতাংশে পৌঁছেছে, যা শিল্প বিনিয়োগে সীমাবদ্ধতা তৈরি করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মৌলিক শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি ২৫.৪২ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে এলসি খোলা হারও ২৫.৪১ শতাংশ কমেছে। অন্যান্য শিল্পের সহায়ক যন্ত্রপাতি আমদানিও ১.৮৮ শতাংশ কমেছে এবং এলসি খোলা কমেছে ০.৫১ শতাংশ।
শিল্প খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রপাতি আমদানি হয় গার্মেন্ট, বস্ত্র ও ওষুধ খাতে। গার্মেন্ট শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি ১২.৪১ শতাংশ বেড়েছে এবং এলসি খোলা ৩.৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বস্ত্র খাতের যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৫.৬৮ শতাংশ এবং এলসি খোলা কমেছে ২৪.৮৮ শতাংশ। ওষুধশিল্পের আমদানি কমেছে ৩৫.২৭ শতাংশ। চামড়াশিল্পের আমদানি ৮.৫৬ শতাংশ বেড়েছে, তবে এলসি খোলা কমেছে ৪৩.৮৫ শতাংশ।
অপরদিকে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি সামগ্রিকভাবে ৮.৩৭ শতাংশ বেড়েছে, যার অধিকাংশই রপ্তানিমুখী খাতে। রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ১৮.৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এলসি খোলা বেড়েছে ৭.২৪ শতাংশ। ফলে দেশের রপ্তানি আয়ও ৮.৬০ শতাংশ বেড়েছে, যদিও বছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি বাড়লেও জুনে তা কমে আসে। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে পুনরায় রপ্তানি আয় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মধ্যবর্তী কাঁচামালের আমদানিও কমেছে ৮.৮৫ শতাংশ, যেখানে সিমেন্ট, রিরোলিং মিল, আয়রন ও স্টিল স্ক্র্যাপসহ বিভিন্ন খাতের উপকরণ অন্তর্ভুক্ত। শিল্প উৎপাদনের প্রবৃদ্ধিও প্রত্যাশিত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ঋণ বা ব্যাঙ্কিং সীমাবদ্ধতার কারণে শিল্প খাতের কার্যক্রমে প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে।