
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের নামে সরকারি বরাদ্দের কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় পর্যায়ে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কাবিখা, কাবিটা ও টিআর প্রকল্পের আওতায় ঘোষিত ২১৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের বেশিরভাগই মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হয়নি। কাগজে-কলমে ‘সম্পন্ন’ দেখিয়ে এসব প্রকল্পের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিক প্রতিষ্ঠানের দাবি, তাদের অনুমতি বা জানানো ছাড়াই নাম ব্যবহার করে বরাদ্দের অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে অধ্যক্ষ নজরুল নগর ইউনিয়নের মাঝের চর বাজার নুরানীয়া ও হাফেজিয়া মাদরাসার মাঠ ভরাটে ৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও সরেজমিনে কাজের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ইউপি বিএনপির সহ-সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম ভুঁইয়া জানিয়েছেন, তিনি ওই মাদরাসার কথা শুনেছেন, তবে বর্তমানে সেটি সক্রিয় আছে কিনা নিশ্চিত নন।
নুরাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব চর তোফাজ্জল আসলামিয়া দাখিল মাদরাসার জন্য ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও প্রতিষ্ঠানে কোনো মাঠ ভরাটের কাজ হয়নি। মাদরাসার সুপার মাওলানা আবু তাহের জানান, তিনি মাত্র ৬০ হাজার টাকা পেয়েছেন, বাকী টাকার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। সহকারী সুপার মো. আবদুল মন্নান বলেন, পূর্ণ বরাদ্দ পেলে প্রতিষ্ঠানের জন্য তা সহায়ক হতো।
চরফ্যাশনের ৭টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক প্রকল্প পরিদর্শনে দেখা গেছে, অধিকাংশ সড়কে অল্প পরিমাণে মাটি ফেলা হয়েছে, যা বর্ষায় ধুয়ে গিয়ে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। অনেক কাজ অসমাপ্ত থাকায় গ্রামীণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসনা শারমিন মিথি বলেন, কয়েকটি প্রকল্প পুনরায় যাচাই-বাছাই করে সংশোধন করা হচ্ছে এবং ঘাটতি পূরণে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, কাজ সম্পন্ন না হলে মামলা ও অর্থ পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা সম্ভব।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, যাচাই শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একই ধরনের অভিযোগ দুলারহাট মহিলা দাখিল মাদরাসায়ও পাওয়া গেছে, যেখানে ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও হাতে এসেছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা। সহকারী সুপার মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, তারা ভেবেছিলেন বরাদ্দ দেড় লাখ টাকা, পরে ফেসবুকে দেখে জানতে পারেন প্রকৃত বরাদ্দ তিন লাখের বেশি।