
দক্ষিণ কোরিয়ার দীর্ঘদিনের জনসংখ্যা সংকট এখন সরাসরি প্রভাব ফেলছে দেশটির সামরিক বাহিনীতে। বিগত ছয় বছরে সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে চার লাখে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে রোববার (১০ আগস্ট) ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, সামরিক সেবার জন্য উপযুক্ত বয়সী পুরুষের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাওয়ায় কর্মকর্তা ও সৈনিক নিয়োগে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে সামরিক প্রস্তুতি বজায় রাখাকে কঠিন করে তুলতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়ার আইনে শারীরিকভাবে সক্ষম প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। প্রশিক্ষণের পর অন্তত ১৮ মাস সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করতে হয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ২০ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে, যারা বাধ্যতামূলক সামরিক সেবার মূল উৎস।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০০০ সালের শুরুর দিকে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীতে ৬ লাখ ৯০ হাজার সদস্য ছিল, যা ২০১০ সালের পর দ্রুত কমতে শুরু করে। ২০১৯ সালে সক্রিয় সদস্য সংখ্যা নেমে আসে ৫ লাখ ৬৩ হাজারে। সর্বশেষ ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার সক্রিয় সেনা সদস্য সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ, যা দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় সংখ্যার তুলনায় ৫০ হাজার সদস্যের ঘাটতিতে রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২১ হাজার নন-কমিশন্ড অফিসার। তবুও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা বাজেট ২০২৫ সালে দাঁড়াবে ৬১ ট্রিলিয়ন উওন (৪৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা উত্তর কোরিয়ার মোট অর্থনীতির চেয়েও বেশি।
বিশ্বের দ্রুততম বয়স্ক সমাজগুলোর একটি হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রজনন হার ২০২৪ সালে ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ—বিশ্বে সর্বনিম্ন। সরকারি পূর্বাভাস বলছে, ২০৭২ সালের মধ্যে দেশটির জনসংখ্যা কমে দাঁড়াবে ৩ কোটি ৬২ লাখে, যা সামরিক বাহিনীর জন্য জনবল সংকট আরও তীব্র করতে পারে।