
সদকা (Sadaqah) শব্দটি এসেছে আরবি সিদক থেকে, যার অর্থ ‘সত্যবাদিতা’ বা ‘সততা’। অর্থাৎ একজন মানুষ যখন আল্লাহর প্রতি তার ঈমানের সত্যতা প্রমাণ করতে নিজের সম্পদ, সময় ও শ্রম আল্লাহর পথে ব্যয় করে—সেটিই সদকা। ইসলামে সদকা শুধু অর্থ দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি অন্তর্ভুক্ত করে যেকোনো কল্যাণমূলক কাজ—
১) অভাবগ্রস্তকে সাহায্য করা
২) পথ থেকে ক্ষতিকর জিনিস সরানো
৩) হাসিমুখে কথা বলা
৪) অসুস্থকে সান্ত্বনা দেওয়া
৫) মানুষের জন্য কল্যাণকর উদ্যোগ গ্রহণ
অর্থ-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দেওয়ার গুরুত্ব
অর্থ ও সম্পদ আল্লাহর আমানত। এর কিছু অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করাই মুমিনের দায়িত্ব। কুরআনে আল্লাহ বহুবার নির্দেশ দিয়েছেন—
“তোমরা যা কিছু দান করো, আল্লাহ তা জানেন।” (সূরা বাকারা: ২৭৩)
অর্থ দিয়ে মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা, দরিদ্রের চিকিৎসা, পানির ব্যবস্থা, খাদ্য বিতরণ—এসব কাজ করা আল্লাহর নিকট অত্যন্ত প্রিয়। এটা শুধু সমাজে সহায়তা নয়, বরং নিজের সম্পদকে হালাল ও পবিত্র রাখার উপায়।
হাদিসের প্রমাণ:
রাসূল ﷺ বলেছেন—
“যে ব্যক্তি একটি খেজুরের সমপরিমাণ কিছু হালাল উপার্জন থেকে আল্লাহর পথে দান করে, আল্লাহ তা তাঁর ডান হাতে নেন এবং পাহাড়সম বড় না হওয়া পর্যন্ত তা বৃদ্ধি করতে থাকেন।” (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
কেন দান ও সদকা করবো?
১) আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন
২) সম্পদে বরকত ও পবিত্রতা আনা
৩) সমাজে সহমর্মিতা সৃষ্টি করা
৪) বিপদ ও রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া
৫) আখিরাতে বিশাল পুরস্কার অর্জন
ফজিলত
পুরস্কার বহুগুণে বৃদ্ধি
“যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি শস্যদানা সদৃশ; তা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয়, প্রতিটি শীষে একশত দানা। আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন।” (সূরা বাকারা: ২৬১)
রহমতের ছায়া
রাসূল ﷺ বলেছেন, “কিয়ামতের দিন আল্লাহ সাত শ্রেণীর মানুষকে তাঁর আরশের ছায়ায় রাখবেন… তাদের মধ্যে একজন হলো সেই ব্যক্তি, যে এমনভাবে গোপনে দান করে যে, তার বাম হাত জানে না ডান হাত কতটুকু দান করেছে।” (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
বিপদ ও রোগ থেকে রক্ষা
নবী ﷺ বলেছেন, “সদকা বিপদকে দূর করে এবং অকাল মৃত্যু ঠেকায়।” (তিরমিযি)
পাপ মোচন
“সদকা পাপকে এমনভাবে নিভিয়ে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।” (তিরমিযি)
প্রতিটি ভালো কাজও সদকা
রাসূল ﷺ বলেছেন, “তোমার ভাইয়ের প্রতি তোমার হাসিমুখ সদকা।” (তিরমিযি)
মূল শিক্ষা
দান ও সদকা কেবল অর্থ প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—এটি প্রতিটি কল্যাণকর কাজের অন্তর্ভুক্ত। তবে অর্থ ও সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদকার একটি রূপ, যা কুরআন ও হাদিসে বারবার উৎসাহিত করা হয়েছে। আমাদের উচিত—
১) মাসে বা সপ্তাহে নির্দিষ্ট অংশ দান করার অভ্যাস গড়ে তোলা
২) গোপনে ও আন্তরিকভাবে দান করা
৩) টাকাপয়সা ছাড়াও সময়, পরিশ্রম ও ভালো আচরণ দান হিসেবে উপহার দেওয়া
এভাবে আমরা দুনিয়ায় বরকত, সমাজে শান্তি এবং আখিরাতে চিরস্থায়ী পুরস্কার অর্জন করতে পারবো।