পানির চাপে ভেঙে গেল ৪৫ বছরের পুরনো সেতু

আপলোড সময় : ০৯-০৮-২০২৫ ১২:৪১:৪৪ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ০৯-০৮-২০২৫ ১২:৪১:৪৪ পূর্বাহ্ন
ভারী বৃষ্টির পানির ঢলে নগরের অক্সিজেন এলাকায় শীতল ঝর্ণা খালের ওপরে ৪৫ বছরের পুরনো সেতুটি ভেঙে তিন টুকরো হয়ে গেছে। সেতুর নিচে সড়কের দুই পাশ থেকে ইটের ভিত্তি ভেঙে মাঝখানের অংশ ধসে পড়ার কারণে তিন টুকরো হয়ে যায় সেতুটি। সেতু ধসে যাওয়ায় ভেঙে গেছে সড়কের এই অংশটিও। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে নগরীতে টানা ভারী বৃষ্টির মধ্যে অক্সিজেনের স্টার শিপ গলি এলাকায় শীতল ঝরনার খালের ওপর থাকা সেতুটি ধসে পড়লে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় নগরীর ব্যস্ততম এই সড়কটি। এতে সেতু সংলগ্ন সড়কসহ আশপাশের সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। সেতুটি দিয়ে নগরের ২ নম্বর গেট থেকে অক্সিজেন যাতায়াত করেন লোকজন। সকাল থেকে দিনভর চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।
 
বায়েজিদ থানার পুলিশ এবং স্থানীয়রা জানান, বুধবার দিবাগত রাতে পানির ঢলে ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে ব্রিজের দুই পাশ থেকে মাটি সরে গিয়ে সড়ক দুই–তিন ভাগ হয়ে যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ও লোকমান হোসেন আজাদীকে বলেন, সকাল ৬টার দিকে সেতুটি ভেঙে পড়ে। শীতল ঝর্ণা খাল দিয়ে তখন তীব্র স্রোতে পানি নামছিল। পানির তোড়ে সেতুটি ভেঙে যায়। ফলে সড়কের একপাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে অন্যপাশ দিয়ে খুবই ধীর গতিতে গাড়ি চলাচল করেছে। উভয়মুখী গাড়ি একই লেন দিয়ে চলাচল করায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
 
সরেজমিন দেখা যায়, হঠাৎ এই ব্যস্ত সড়কটির এক পাশে সেতুটি ভেঙে পড়লে প্রায় অচল হয়ে পড়ে বায়েজিদ বোস্তামী সড়কটি। এক পাশ ভেঙে পড়ায় এখন অক্সিজেন থেকে ২ নম্বর গেটমুখী অংশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। তবে এই পাশের একাংশেও মাটি দেবে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এক পাশের গাড়ি গেলে অন্য পাশের গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশদের। এতে দুই পাশেই গাড়ির জট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে গতকাল স্কুল–কলেজ ও অফিস–আদালত খোলা থাকায় যাতায়াতের সময়ে গাড়ির দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। আর সাপ্তাহিক কর্মদিবসের শেষ দিন হওয়ায় সন্ধ্যার দিকে যানজটের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায় বলে জানান দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা।
 
সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী জানান, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় শীতল ঝরনা খাল প্রশস্ত করা হয়। এরপর থেকে খালে পানিপ্রবাহ বেড়ে যায়। খাল প্রশস্ত হলেও ইটের তৈরি সেতু আগের মতো ছিল। এতে পানিপ্রবাহের কারণে ধীরে ধীরে সেতুর দুই পাশ থেকে মাটি সরে যেতে থাকে। দেয়ালও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর আজ ভোর থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। পানির চাপে সেতুটি দুই ভাগ হয়ে গেছে।
 
নগরের ২ নম্বর গেইট, বায়েজিদ বোস্তামীসহ বিবিরহাট এলাকার পাশাপাশি উত্তর চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। মূলত চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান উপজেলা, অক্সিজেন মোড় হয়ে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িমুখী যানবাহন চলে বায়েজিদ বোস্তামি সড়কের এই মোড়টি জংশনে পরিণত হয়েছে। সড়কটির দুই পাশে বেশ কিছু নামীদামী শিল্প কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেতু ভেঙে পড়ায় ওই সড়কসহ আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে যানজট।
 
এদিকে বৃষ্টিতে সেতু ধসে পড়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন। এসময় মেয়র বলেন, অক্সিজেন এলাকায় শীতল ঝর্ণাখালের উপর ভেঙে যাওয়া ব্রিজের জায়গায় এক বছরের মধ্যে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এই সেতুটি প্রায় ৫০ বছর পুরনো। আমরা বর্ষার পরে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করেছিলাম। প্রকল্পটির ব্যয় হতে পারে ৮ থেকে ৯ কোটি টাকা। বর্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা কাজ শুরু করব। তিনি বলেন, পুরনো সেতুটি ২০ ফুট প্রশস্ত। এর জায়গায় ৬০ ফুট প্রশস্ত একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে ভারী যানবাহনের চাপেও সেটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
 
এসময় মেয়র জনগণকে সাময়িক ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা ট্রাফিক বিভাগকে অনুরোধ করেছি ভারী যান চলাচলের জন্য বিকল্প রুট নির্ধারণ করতে। ডিসি ট্রাফিক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই নাসিরাবাদ হয়ে একটি অল্টারনেটিভ রোড প্রস্তুত করেছেন, যেখানে ভারী যানবাহনগুলো চলবে। অক্সিজেন এলাকা দিয়ে শুধুমাত্র হালকা যান চলাচল করবে।
 
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, শীতল ঝরনা খালের ওপর সেতুটি নির্মিত হয় ১৯৮০ সালের দিকে। ওই সময়ের নকশায় করা সেতুটি অনেক দিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় শীতল ঝরনা খাল প্রশস্ত করার পর আরও বেশি ঝুঁকি তৈরি হয়। কেননা ওই সময় খালের প্রশস্ততা বেড়ে গিয়েছিল। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত সংস্কারের কাজ শুরু করবেন বলে জানান তিনি।
 
স্থানীয়দের দাবি, এই সড়কটি নগরের খুবই গুরুত্বপর্ণ। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী চলাচল করে। এই সড়কটির গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তারা। এ সেতু দ্রুত সংস্কার না করলে সড়কে আরও বেশি যানজট হবে।

সম্পাদকীয় :

লাইসেন্স নং: TRAD/DNCC/013106/2024 বার্তা বিভাগ: [email protected] অফিস: [email protected]

অফিস :

যোগাযোগ: মিরপুর, শেওড়াপাড়া হটলাইন: 09638001009 চাকুরী: [email protected]