
ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় ‘অড’ অঞ্চলে দাবানল ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত ৭৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক এই দাবানলে রাজধানী প্যারিসের চেয়েও বড় এলাকাজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া আগুন নেভাতে কাজ করছেন দুই হাজারেরও বেশি দমকলকর্মী ও সেনাসদস্য। কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও আগামী কয়েকদিন আগুন জ্বলতে থাকবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ফ্রান্সে চলমান দাবানলের ভয়াবহতা পেরিয়ে গেছে প্যারিস শহরের আয়তনকেও। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া ৭৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় এই দাবানল এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও আগামী কয়েকদিন ধরে তা জ্বলতেই থাকবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
গত মঙ্গলবার রিবোত গ্রামের কাছে শুরু হওয়া এই আগুনে একজন নারী মারা গেছেন এবং ১১ জন দমকলকর্মীসহ অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিবিসি বলছে, আগুন নেভাতে ২ হাজারেরও বেশি দমকলকর্মী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে আছেন। ৫০০টিরও বেশি অগ্নিনির্বাপক যানবাহন এবং পানিবাহী বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে। আগুন এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার হেক্টরেরও বেশি এলাকা পুড়িয়ে দিয়েছে— যা প্রায় ৪২ হাজার একরের সমান।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, আগুন “নিয়ন্ত্রিত” হলেও এখনও নিভে যায়নি। আগামী কয়েকদিন ধরে কাজ চলবে। এরই মধ্যে ওই অঞ্চলের বনাঞ্চলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং বেশ কিছু রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, কারণ সেখানে বৈদ্যুতিক তারসহ বিভিন্ন ঝুঁকি রয়েছে।
উপগ্রহ চিত্রেও দাবানলের ধোঁয়া ও পোড়া ভূমির বিস্তীর্ণ চিহ্ন দেখা গেছে। ১৭টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং বাসিন্দাদের বাড়ি ফিরতে নিষেধ করা হয়েছে।
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু একে “অভূতপূর্ব দুর্যোগ” বলে উল্লেখ করেছেন এবং দাবানলের কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন ও খরার কথা বলেছেন। পরিবেশমন্ত্রী আগনেস পানিয়ে-রুনাশেও দাবানলের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন।
বাইরু জানান, দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পেছনে তীব্র বাতাস, শুকনো গাছপালা ও প্রচণ্ড গরম ভূমিকা রেখেছে।
এদিকে জোনকিয়ের গ্রামে কয়েকটি বাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে। গ্রামটির মেয়র জ্যাক পিরো জানিয়েছেন, “গ্রামের প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা পুড়ে গেছে। গাছপালাও পুরোটাই পুড়ে গেছে, চারপাশে শুধু কালো ছাই।”
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গত বুধবার বলেছেন, “রাষ্ট্রের সব সম্পদ এই দুর্যোগ মোকাবেলায় নিয়োজিত রয়েছে”। তিনি সবাইকে “চূড়ান্ত সতর্কতা” অবলম্বনের আহ্বানও জানিয়েছেন।