‘জুলাই ৩৬’ কনসার্ট করতে ৭৬ লাখ টাকা চেয়ে ৭০ প্রতিষ্ঠানে সাবেক সমন্বয়কের চিঠি সুপারিশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

আপলোড সময় : ২৯-০৭-২০২৫ ০৭:৪৯:২৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৯-০৭-২০২৫ ০৭:৪৯:২৪ অপরাহ্ন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারের বিরুদ্ধে অনুদানের নামে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চব্বিশের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’ কনসার্ট আয়োজনের জন্য ৭০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৭৬ লাখ টাকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। 

আগামী ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা এই কনসার্ট। ইতোমধ্যেই রাজশাহী সিটি করপোরেশন তাদের দুই লাখ টাকাও দিয়েছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।

 

 

ফেসবুকে সালাউদ্দিন আম্মার নিজেই স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন, অন্তত ৭০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের দেওয়া চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব সুপারিশও করেছেন। 

অনুদান চেয়ে চিঠি দেওয়া রাবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার ও ‘ক্যাম্পাস বাউলিয়ানা’ নামের একটি দলের পরিচালক কে এস কে হৃদয়।

রাসিকে দেওয়া আবেদনের প্রেক্ষিতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তাদের দুই লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। তবে, অনুদান প্রদানের বিষয়ে জানতে রাসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক খোন্দকার আজিম আহমেদকে দুদিনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাকে কলে পাওয়া যায়নি।




রাসিক সচিব রুমানা আফরোজের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন শুনে কোনো মন্তব্য করেননি।

তবে টাকা দেওয়ার ছাড়পত্রে সই থাকা রাসিকের বাজেট কাম হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম খানের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়গুলো প্রশাসক স্যার দেখেন। আমি দেখি না। তাই বলতে পারছি না। টাকার বিষয়ে দেখে আমি পরে আপনাকে জানাতে পারবো।’


ভাইরাল হওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজশাহীর গৌরবময় ইতিহাসে ৩৬ জুলাই একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনটি আমরা ‘জুলাই আন্দোলন’ হিসেবে স্মরণ করি, যেখানে বহু তরুণ শহীদ হয়েছিলেন এবং অনেকে আহত হয়েছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামে। এই ঐতিহাসিক ঘটনার একবছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা আয়োজন করতে যাচ্ছি ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’। এই উৎসবে রাজশাহীর শহীদ পরিবার, আহতদের পরিবার, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সম্মানিত সমন্বয়কবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও তরুণ প্রজন্মকে তাদের আত্মত্যাগের গল্প জানানো। এই মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান কামনা করছি। আপনাদের সহযোগিতা পেলে এই আয়োজন আরও সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার

 

ভাইরাল হওয়া চিঠিটি ছাড়াও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, রবি আজিয়াটা লিমিটেড ও ওয়ালটনে তাদের দেওয়া প্রস্তাবনা সমকালের হাতে এসেছে। এতে রাবি উপাচার্যের সুপারিশ রয়েছে।



চিঠিতে বলা হয়েছে, ৩৬শে জুলাই ‘মুক্তির উৎসব’ (স্বাধীনতার উৎসব) আয়োজনে আপনার সদয় সমর্থন এবং সহযোগিতা কামনা করছি, যা ৫ই আগস্ট, ২০২৫ তারিখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এই অনুষ্ঠানে বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের আমন্ত্রিত অতিথিসহ প্রায় ৪০ হাজার অংশগ্রহণকারী অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানে জুলাই মাসের তথ্যচিত্র, শহীদ পরিবারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং ইন্টারেক্টিভ বিভাগ থাকবে যা জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সমৃদ্ধি তুলে ধরে এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যকে উৎসাহিত করে। যেহেতু এটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের দ্বারা আয়োজিত একটি অলাভজনক উদ্যোগ, তাই এই অনুষ্ঠানটিকে একটি দুর্দান্ত সাফল্যের জন্য আমরা বিনীতভাবে আপনার সদয় সহযোগিতা এবং সমর্থন কামনা করছি। এই চিঠির সাথে আপনার সদয় বিবেচনার জন্য বিস্তারিত অনুষ্ঠানের বাজেট এবং কর্মসূচির রূপরেখা সংযুক্ত করা হয়েছে।



এই বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘বিষয়টি তো চাঁদাবাজির মতোই হয়ে গেল। একটু ঘুরিয়ে ভিন্নভাবে চাঁদাবাজি করা আরকি! একজন ছাত্রনেতা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকে এভাবে চিঠি দিয়ে চাঁদা দাবি করতে পারেন কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন তো থেকেই যায়!’

চিঠিটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন, আবার অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা এক পোস্টে লিখেন, এই আয়োজন কারা করছে সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই নিয়ে একটা সিনেমার বিষয়ে সহায়তার জন্য আমরা রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু তিনি কোনো সহায়তা করেননি। অথচ এখানে কনসার্ট হবে সেখানে তিনি কীভাবে সহায়তা দেন?



এক ফেসবুক পোস্টে শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক নাফিউল ইসলাম লিখেছেন, ‘জুলাই-অভ্যুত্থানে এখনো অসংখ্য আহতরা তাদের চিকিৎসা করতে পারেনি। সরকারি টাকায় উদযাপনের আগে তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই আন্দোলনে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, সুতরাং একক ক্রেডিট নিয়ে সরকারি টাকায় জুলাই উদযাপন করা জুলাই যোদ্ধাদের সাথে মুনাফেকি করার নামান্তর।’



চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, আমাদের দেওয়া রাসিকের চিঠিটি নিয়ে নোংরামি করা হচ্ছে। অথচ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, ওয়ালটন, যমুনা ব্যাংক, সুলতানস ডাইনসহ প্রায় ৭০টি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে আমরা প্রপোজাল দিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যারের সুপারিশ নিয়ে, যথাযথ নিয়ম মেনেই প্রোপোজাল দেওয়া হয়েছে। আমাদের উপাচার্য স্যার প্রতিটি প্রপোজালে তার সিল, স্বাক্ষর দিয়েছেন। সিটি কর্পোরেশনে আমরা চিঠি দিয়ে বলেছিলাম আপনাদের পক্ষ থেকে যতটুকু করা যায় আপনারা করবেন। আমাদের ব্যানার হবে ৬৮ থেকে ৭২ পর্যন্ত সকল ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজন। এর আগেও রাসিক বিভিন্ন সংগঠনকে অর্থায়ন করেছে। আয়োজনটা যেন না করতে পারি সেজন্য এটা নিয়ে এক পক্ষ নোংরামি শুরু করেছে। আমার পেছনে সব পক্ষ লেগে রয়েছে।


 


অনুষ্ঠানের আরেক আয়োজক কে এস কে হৃদয় বলেন, কোনও একটা প্রোগ্রাম অর্গানাইজ করার সময় বিভিন্ন কোম্পানির কাছে স্পন্সর এর প্রপোজাল দেওয়ার রীতি নতুন নয়। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে। স্পন্সর নেওয়া যদি চাঁদাবাজি হয়, তাহলে আমি বলবো যুগ যুগ ধরে এই চাঁদাবাজি চলতেছে। সিটি কর্পোরেশন শুধু আমাদের না, সব ভালো কাজেই স্পন্সর করে। কিছু দিন আগে একটা সংগঠনের বইমেলায় স্পন্সর করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের কনফারেন্সে করছে। তাই আমাদের প্রোগ্রামের জন্য এটা ব্যতিক্রম কিছু নয়। তাছাড়া প্রত্যেক কোম্পানির কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকে সেই জায়গা থেকে তারা সামাজিক কাজগুলোতে অনুদান দেয়। যেমন: ব্যাংকগুলো সিএসআর ফান্ড থেকে টাকা দেয়। আর বড় কোম্পানিগুলোর টাকা আমাদের হাত পর্যন্তও আসে না। তারা নিজেরাই সব জায়গায় পেমেন্ট করে। আমাদের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম কিছু হবে না। আমরা প্রপোজালে কোথায় কত টাকা খরচ হবে, সবকিছু উল্লেখ করে দিয়েছি। পুরো প্রোগ্রাম সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছি।



সম্মতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, আমি প্রথমেই বলে দিয়েছি এই আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো অর্থ সহায়তা করতে পারবে না। এটা সম্পূর্ণ তোমাদের উদ্যোগে করতে হবে। তখন সে আমায় বলে অর্থ বরাদ্দের জন্য সুপারিশ করে দিতে। আমি ক্যাম্পাসের অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্য এর আগেও সুপারিশ করেছি। এটাও সেরকমই একটি ছিল।

সম্পাদকীয় :

লাইসেন্স নং: TRAD/DNCC/013106/2024 বার্তা বিভাগ: [email protected] অফিস: [email protected]

অফিস :

যোগাযোগ: মিরপুর, শেওড়াপাড়া হটলাইন: 09638001009 চাকুরী: [email protected]