
ইসলামের ইতিহাসে কোরআনে কারিমের রেকর্ডিং ও সম্প্রচারের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অধ্যায় রচনা করেন খ্যাতিমান কারি শায়খ মাহমুদ খালিল আল-হুসারি। তিনি মিসরের বাসিন্দা।
আধুনিক যুগে কোরআন মাজিদের পূর্ণাঙ্গ তেলাওয়াতের প্রথম অডিও রেকর্ডিং তার কণ্ঠেই সম্পন্ন হয়, যা পরে অডিও ক্যাসেট ও সিডির মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে পড়ে।
এ রেকর্ডিং শুধু আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে নয়, বরং বিশুদ্ধ তাজবিদ ও কেরাতের দৃষ্টিকোণ থেকেও ছিল সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
শায়খ আল-হুসারি যে রেওয়ায়াত (রীতি) অনুসরণে কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত করেন, তা ছিল ‘আসিম থেকে হাফস’-এর বর্ণনা।
এই রেকর্ডিং সম্পন্ন হয়েছিল একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির তত্ত্বাবধানে, যার নেতৃত্বে ছিলেন তাজবিদ ও কেরাতের খ্যাতনামা আলেম শায়খ আমের আস-সাইয়্যিদ উসমান। এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন মিসরের অভিজ্ঞ কারি ও আলেমগণ। যদিও শায়খ আল-হুসারি ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ, কোরআন তেলাওয়াতে পারদর্শী ও সুমধুর কণ্ঠের অধিকারী, তবু এই রেকর্ডিং সহজে সম্পন্ন হয়নি। প্রতিটি আয়াত ও শব্দের উচ্চারণ, মাখরাজ, মদ্দ, কসর ও ওয়াকফসহ সব বিষয়কেই নিখুঁতভাবে নিরীক্ষণ করা হতো।
প্রয়োজনে তেলাওয়াতের অংশবিশেষ বারবার রেকর্ড করিয়ে নেওয়া হতো, যেন তাতে কোনোরূপ বিচ্যুতি না থাকে। ওই কমিটি নিশ্চিত করতে চেয়েছিল, এই রেকর্ডিং যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অনবদ্য আদর্শ হয়ে থাকে। এই প্রকল্পের মাধ্যমেই আধুনিক যুগে সর্বপ্রথম তেলাওয়াতকৃত পূর্ণাঙ্গ কোরআন অডিওরূপে সংরক্ষিত হয় এবং তা ইসলামি দুনিয়ায় এক নতুন যুগের সূচনা করে। পরবর্তীকালে বহু কারি ও প্রতিষ্ঠান এ রেকর্ডিংকে অনুসরণ করে কোরআনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে অনুপ্রাণিত হন।
শায়খ আল-হুসারির এই ঐতিহাসিক কীর্তি আজও সমগ্র মুসলিম বিশ্বে সমাদৃত এবং কোটি কোটি মুসলমান তার কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত শুনে প্রশান্তি লাভ করেন। আধুনিককালের কোরআন রেকর্ডিং ইতিহাসে তিনি একটি ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সূচনা করেন।