গঙ্গাচড়ায় আতঙ্ক কাটেনি, জিনিসপত্র নিয়ে গ্রাম ছাড়ছেন অনেকে

আপলোড সময় : ২৮-০৭-২০২৫ ০৮:৪০:৪০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৮-০৭-২০২৫ ০৮:৪০:৪০ অপরাহ্ন

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে কিশোর (১৭) গ্রেপ্তার হলেও উত্তেজিত জনতা ওই কিশোরের বাড়িসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ১৮টি বসতঘরে দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। এতে গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামের হিন্দুপল্লির বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই ভয়ে তাদের জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। 

 

সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবু স্থানীয় লোকজনের ভয় কাটছে না। ফলে তারা বিভিন্ন স্থান ও আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাচ্ছেন।


 

 

 

তারা বলছেন, দোষীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার শাস্তি হোক আমরাও চাই। কিন্তু অসহায় গ্রামবাসীদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা অমানবিক। তাদের অভিযোগ, মাইকিং করে লোকজন ডেকে গ্রামটিতে হামলা করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ওই কিশোর ফেসবুকে ধর্ম অবমাননা করেছে এমন অভিযোগ পায় পুলিশ। পরে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আটক করে শনিবার রাতে থানায় আনা হয়। পরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে রোববার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠানো হয় তাকে। ওই কিশোর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা শনিবার রাতে ওই কিশোরের বিচারের দাবিতে মিছিল করে। পরে তার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। সেই সঙ্গে আশপাশের কয়েকটি বাড়িতেও হামলা ও ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা। পরে রাতে থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রোববার এ বিষয়ে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাংলাবাজার এবং খিলালগঞ্জ এলাকায় ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে মাইকিং করে লোকজন জড়ো করে বিকেলে গ্রামে ঢুকে অন্তত ১৮টি পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়।

 

 

 

জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো হলো- প্রমোদ মোহন্ত, সুজন রায়, কিশোব রায়, জয়চাঁদ রায়, অমিত মোহন্ত, রবিন্দ্রনাথ রায়, ধরনী মোহন্ত, অতুল রায়, সুমন রায়, ধনঞ্জয় রায়, কমলাকান্ত রায়, সুবল রায়, অবিনাশ রায়, লালমোহন রায়, হরিদাস রায়, মনোরঞ্জন শীল, লিটন মোহন্ত ও উপিন চন্দ্র মোহন্ত। 

এসব পরিবারের সদস্যদের দাবি, হামলা চালানো বেশিরভাগ মানুষই ছিল কিশোরগঞ্জের বাংলাবাজার এলাকার। যাদের মধ্যে কিশোরের সংখ্যা বেশি। হামলা চালিয়ে তারা শুধু বাড়িঘর ভাঙচুর করেনি, তারা ঘরে থাকা স্বর্ণ, নগদ টাকা, চালের বস্তা, গরু, কাপড়-চোপড় ও আসবাবপত্রসহ কাঁসার থালাবাসন লুট করে নিয়ে গেছে।


 

সোমবার দুপুরে ভ্যানে জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছিলেন অধীর চন্দ্র রায়। তিনি সমকালকে বলেন, ‘ঘরে চাল নেই, চুলো নেই। থাকার কোনো পরিস্থিতি নেই। পকেটে টাকাও নেই। শনিবার লোকজন হামলা করে কয়েকটি গরু লুট করে নিয়ে গেছে। এখন সম্বল বলতে দুইটি গরু আছে। এগুলো রক্ষা করতে হবে। তাই গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’

পলাশ চন্দ্র রায়ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ছি। এখানে থাকলে আবার কখন হামলা হয়, জানি না। এখন আর নিরাপদ বোধ করছি না এখানে।’  

স্থানীয় সুবাস রায় বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই রোববার আমাদের ওপর হামলা হয়েছে, তারা কিচ্ছু করতে পারেনি। ফের যদি হামলা হয়! সে কারণে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন অনেকে।’


 

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত রবীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এ সময় তারা গরু, টিভি, ফ্রিজ, স্বর্ণ, নগদ টাকা, কাপড়-চোপড় ও আসবাবপত্রসহ সংসারের জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে।’

সোমবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ২৫টি পরিবার গ্রাম ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য পরেশ চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, বিভিন্ন নম্বর থেকে মোবাইলফোনে হুমকি পাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। ফলে ভয়ে অনেকে গ্রাম ছাড়ছেন। শনিবার রাতে হামলার পর থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ২৫ পরিবার গ্রাম ছেড়েছেন। এ ছাড়া গ্রামবাসীরা ভয়ে বাইরে বেরও হচ্ছেন না বলে জানান তিনি।


 


এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল এমরান বলেন, কিছু পরিবার আতঙ্কে বাড়ি ছেড়েছেন। অনেকে হামলার ভয় করছেন। তবে আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি। ওই গ্রামে এখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, হামলার ঘটনায় এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।


 


গঙ্গাচড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার ওই কিশোরের পরিবার ও স্বজনরা ভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। এ ছাড়া কিছু পরিবার হামলার ভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন বলে জেনেছি। তবে আমরা গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করেছি যে, বাড়ি ছাড়ার প্রয়োজন নেই।’

বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। তাদের আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হবে।’

সম্পাদকীয় :

লাইসেন্স নং: TRAD/DNCC/013106/2024 বার্তা বিভাগ: [email protected] অফিস: [email protected]

অফিস :

যোগাযোগ: মিরপুর, শেওড়াপাড়া হটলাইন: 09638001009 চাকুরী: [email protected]