
গাজার আকাশ আজও ধোঁয়ায় ঢাকা, রাস্তায় ছড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তূপের গন্ধ। নারী-শিশুর কান্না আর ক্ষুধার্ত মানুষের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস। এমন এক দুঃসময়ে আবারও এগিয়ে এলো মিসরের আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক হৃদয়।
আজহারের প্রধান ইমাম ও বাইতুল যাকাত ও সাদাকাহ’র পরিচালক ড. আহমেদ আত-তাইয়েবের নির্দেশে গাজায় রওনা হলো একাদশ ত্রাণ কাফেলা—যেখানে রয়েছে হাজার হাজার টন খাদ্য, ওষুধ, শিশুদের দুধ, কম্বল এবং এক হাজার সম্পূর্ণ সজ্জিত তাঁবু।
এই কাফেলা কেবল ত্রাণ নয়, বরং এটি উম্মাহর দয়া ও ভালোবাসার প্রতীক। গাজার ধ্বংসস্তূপে যখন জীবনের স্পন্দন ক্ষীণ হয়ে আসছে, তখন এই কাফেলা যেন এক আশার আলো হয়ে প্রবেশ করছে মানুষের হৃদয়ে।
ত্রাণ কাফেলায় রয়েছে নারী ও শিশুদের জন্য জরুরি ওষুধ, স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী, শিশুখাদ্য, ডায়াপার, পরিষ্কার পানীয় জল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য। যারা ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে, তাদের জন্য এক হাজার সজ্জিত তাঁবু অন্তত কিছুটা নিরাপত্তা ও স্বস্তি দেবে।
বাইতুল যাকাত ও সাদাকাহ’র আন্তর্জাতিক মানবিক প্রচারণা “গাজাকে সাহায্য করুন” ইতোমধ্যে ৮০টিরও বেশি দেশের মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। শাইখুল আজহারের আহ্বান—“তোমাদের সম্পদ দিয়ে জিহাদ করো, ফিলিস্তিনকে সাহায্য করো”—আজ এক বিশ্বজনীন প্রতিজ্ঞায় রূপ নিয়েছে।
মিসরের গলি থেকে ইউরোপের প্রান্তর, এশিয়ার শহর থেকে আফ্রিকার গ্রাম—অসংখ্য মানুষ তাদের দানের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেই দানের প্রতিটি ফোঁটা গিয়েছে গাজার ক্ষুধার্ত শিশুর মুখে খাদ্য, আহত মায়ের হাতে ওষুধ, আশ্রয়হীন পরিবারের মাথায় একটি ছায়া।
যারা চান, তারাও এই দয়ার কাফেলার অংশ হতে পারেন। আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত বাইতুল যাকাত ও সাদাকাহ হলো একটি বিশ্বস্ত সেতু, যার মাধ্যমে আপনার দান পৌঁছে যাবে সরাসরি গাজার ভাঙা হৃদয়ে। ক্ষুধার্ত শিশুর কণ্ঠে একটি হাসি, আহত মায়ের চোখে একফোঁটা শান্তির জল—আপনার সামান্য দানই হতে পারে সেই অলৌকিক সান্ত্বনা।
আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মিশন কেবল ত্রাণ নয়; এটি এক আধ্যাত্মিক বার্তা। এটি বলছে—গাজা একা নয়, ফিলিস্তিনের কষ্ট উম্মাহর কষ্ট, তাদের অশ্রু আমাদের চোখের পানি। যখন আগ্রাসনের ধোঁয়া আকাশ ঢেকে রাখে, তখন আজহার থেকে ছড়িয়ে পড়ে দয়ার আলো, ভালোবাসার স্পর্শ।
লেখক: শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিসর