
হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দার আহ্বানে সাড়া দিয়ে গাজা রক্ষায় একটি জরুরি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে ‘তানসিকিয়াতুল উলামা’ বা আন্তর্জাতিক আলেম সমন্বয় কমিটি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গাজায় যা ঘটছে তা এখন শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং আলেম ও দাঈদের দায়িত্বশীলতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার জন্য এক কঠিন পরীক্ষা।
এই বৈঠকে বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রতিনিধিত্বকারী আলেম ও দাঈরা অংশ নেন। তাঁরা দাওয়াতি, জনসম্পৃক্ত এবং ত্রাণ সহায়তাভিত্তিক—এই তিনটি স্তরে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে একমত হন। বিবৃতিতে বলা হয়, এখন আর নিরপেক্ষ বক্তব্য বা নিস্পৃহতার সময় নয়, সময় এসেছে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসার।
তাৎক্ষণিক দাওয়াতি ও সচেতনতা উদ্যোগ:
বিবৃতিতে প্রতিটি দেশের আলেম ও দাঈদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানানো হয়, যাতে গাজার সাহায্যে দাওয়াতি কর্মকাণ্ড ও প্রচারণার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা যায়। এসব কমিটি সিদ্ধান্তগ্রহণকারী কেন্দ্রগুলোর সামনে অবস্থান কর্মসূচি, অনশন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করবে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথাও বলা হয়, যাতে সীমান্ত খুলে দেওয়া হয় এবং ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
এ ছাড়া বিবৃতিতে মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি মসজিদে একই দিনে গাজার সংকট নিয়ে খুতবা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। গণমাধ্যম ও দাওয়াতি ভাষার সমন্বয়ের ওপর জোর দেওয়া হয় এবং আলেমদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে গাজার পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়।
জনগণকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান:
বিবৃতিতে মুসলিম জনসাধারণকে দখলদার রাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দূতাবাসগুলোর সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে তুরস্ক, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়াসহ মুসলিম দেশগুলোকে নিজেদের পতাকাবাহী আনুষ্ঠানিক ত্রাণবহর গাজায় পাঠিয়ে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ করার আহ্বান জানানো হয়।
এ ছাড়া দখলদার রাষ্ট্রকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে বয়কট করার একটি সম্মিলিত অভিযানে যুক্ত হওয়ার ডাক দেওয়া হয়। জনগণের শক্তিকে সরকারের ওপর ধারাবাহিক চাপ সৃষ্টি করার একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহারের কথাও বলা হয়। পাশাপাশি যেসব গণমাধ্যম সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পক্ষে প্রচার চালায়, সেগুলোর বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম:
ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমে গাজার ভেতরে সরাসরি খাদ্যসামগ্রী ও প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। এমনকি প্রতিবেশী দেশের জনগণের চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে হলেও এ কাজ বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়। কমিটি মনে করে, মুসলিম বিশ্বে যেসব প্রকল্প এখন জরুরি নয়, সেগুলোর জন্য অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে তা গাজার শিশু ও ক্ষুধার্তদের খাদ্য সরবরাহে ব্যবহার করা উচিত।
বিবৃতিতে প্রতিটি আলেম সংগঠনকে একটি সুস্পষ্ট ত্রাণ কর্মসূচি হাতে নিয়ে তা জনগণের সামনে উপস্থাপন করার আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতির শেষাংশে আলেমরা কথায় ও কাজে গাজা ও ফিলিস্তিনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তাঁদের বক্তব্য, এখন সত্যবাদীদের পরীক্ষার সময়। এই পরিস্থিতিতে নীরব থাকা মানে আমানতের খেয়ানত। দুর্ভিক্ষ ও আগ্রাসনের সময়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া চলে না।
সূত্র: আল জাজিরা