বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার পর আবারো আলোচনায় এসেছে বিমানবাহিনীতে বহুল ব্যবহৃত চীনা যুদ্ধবিমান এফ-৭ বিজিআই। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অন্তত আটটি দেশে এই সিরিজের বিমান নানা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। চীনের তৈরি এই বিমানটির সক্ষমতা ও নিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশে এফ-৭ বিজিআই প্রথম সংযুক্ত হয় ২০১৩ সালে। এতে আধুনিক অ্যাভিওনিক্স, ডিজিটাল ককপিট ও দিন-রাত যুদ্ধের সুবিধা থাকলেও, এটি মূলত ১৯৫০ এর দশকের সোভিয়েত প্রযুক্তিনির্ভর মিগ-২১ এর উপর ভিত্তি করেই তৈরি। ২০২২ সালে বাংলাদেশ দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও কিছু এফ-৭ বিজিআই সংগ্রহ করে। যদিও "বিজিআই" সংস্করণটিকে উন্নত বলা হয়, অনেক অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ একে একটি পুরনো নকশার ফ্রেমে আধুনিক যন্ত্রাংশ বসানো মাত্র বলেই মনে করেন। ফলে নিরাপত্তা প্রশ্নে সন্দেহ থেকেই যায়।
সম্প্রতি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে যে দুর্ঘটনাটি ঘটে, সেটি এফ-৭ সিরিজের অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। এতে আবারও মানুষ জানতে চেয়েছেন—এই বিমানের এর আগেও কি এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে অন্য কোথাও?
গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালে টাঙ্গাইলে এফ-৭ এমবি ভেঙে পড়ে, পাইলট মারা যান। ২০১৫ সালে বঙ্গোপসাগরে একটি এফ-৭ নিখোঁজ হয়। আবার ২০১৮ সালে এক এফ-৭ বিজি বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারান এক স্কোয়াড্রন লিডার।
বাংলাদেশের বাইরেও বহু দুর্ঘটনার খবর আছে। পাকিস্তানে ২০১৫ সালে, এফটি-৭ পিজি প্রশিক্ষণ বিমানে প্রাণ হারান দেশটির প্রথম নারী ফাইটার পাইলট মারিয়াম মুখতিয়ার। ২০২০ সালে আরেক দুর্ঘটনায় মারা যান দুই পাইলট এবং পাঁচ জন সাধারণ মানুষ।
চীনে, যেখানে এই বিমান তৈরি হয়, সেখানেও জে-৭ নামে পরিচিত এর বিভিন্ন সংস্করণ একের পর এক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে একটি আবাসিক এলাকায় ভেঙে পড়ে হতাহত হন সাধারণ মানুষ। ২০২২ সালে হুবেই প্রদেশে ঘটে আরেকটি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা।
মিয়ানমারে ২০১৮ সালে, একই দিনে দুটি এফ-৭ এম বিমানের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দুই পাইলট ও এক সাধারণ মানুষের। ইরানে ২০২২ সালে এক বিধ্বস্ত হওয়া এফ-৭ বিমান কেড়ে নেয় দুই পাইলটের প্রাণ।জিম্বাবুয়েতেও, ২০২৫ সালে একটি জে-৭ আইআইএন মডেল দুর্ঘটনায় পড়ে এবং পাইলট নিহত হন।
বিশ্লেষকদের মতে, এফ-৭ একটি অপ্রচলিত প্ল্যাটফর্ম, যার উপর আধুনিক উপকরণ বসালেও নিরাপত্তা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা যায় না। এই নকশাটি এমন এক সময়ের জন্য তৈরি, যখন যুদ্ধবিমান নির্মাণে গতি ছিল প্রধান বিবেচ্য। কিন্তু আজকের যুগে শুধু গতি নয়, দরকার বহুমুখী কর্মক্ষমতা এবং নিরাপদ অপারেশন সক্ষমতা, যা এই বিমান যথাযথভাবে দিতে পারছে না।