পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজন। তারা বলেছেন, বিশ্বজিৎ ও আবরার ফাহাদের হত্যার সঙ্গে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী সোহাগের হত্যার পার্থক্য কোথায়? বিগত ১৫ বছরের আওয়ামী জাহেলিয়াতের সঙ্গে মানুষ কেন অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ মাসের শাসনকে মেলানোর চেষ্টা করবে? এটা আমাদের রাজনৈতিক পরাজয়।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘ছাত্র শ্রমিক জনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি- বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তারা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ এই সভার আয়োজন করে।
সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ দলীয় গণ্ডির বাইরে গিয়ে মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে একমত হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সব বিষয়ে একমত হওয়ার কোনো বিষয় নেই। আমরা সব বিষয়ে একমত হবো না। কিছু মৌলিক জায়গায় এক হতে হবে। যেমনটি আমরা একমত হয়েছিলাম গত বছরের জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদের পতন প্রশ্নে।
আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহি ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক উত্তরণে জুলাই সনদ প্রণয়নে কাজ করছে। আশা করি, সবাই মিলে জুলাই সনদ স্বাক্ষর করা যাবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশকে অনেকেই ‘গণিমতের মাল’ বিবেচনা করে যা খুশি তাই করছেন। ১৫ বছরের আওয়ামী জাহেলিয়াতের সঙ্গে মানুষ কেন এই সরকারের ১১ মাসের শাসনকে মেলানোর চেষ্টা করবে। এটা আমাদের রাজনৈতিক পরাজয়। এত জনসমর্থনের পরও কেন সরকার তা ধরে রাখতে পারল না, তার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার করছেন ভালো কথা। প্রয়োজনে এসবে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিজেরাই মামলা করুন। কঠোর আইনানুগ সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিন।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আর যাই করেন, আমাদের কর্মকাণ্ড যেন আওয়ামী জাহেলিয়াতকে অতিক্রম করে না যায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষপাতমূলক ভূমিকার সমালোচনা করে বিএনপির সহআন্তর্জাতিক সম্পাদক বারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল– গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার দ্বিধা-বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু সরকার একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে ও তাদের পাশে থেকে জাতিকে আরও দ্বিধা-বিভক্তির পথে ঠেলে দিচ্ছে। চেয়ারের মজা নিতে গেলে দায়িত্বশীল আচরণও করতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের কথা বললেই সংস্কারের ধুয়া তোলা হচ্ছে। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে, সেসব বিষয়েই সংস্কার করুন। বাকিটুকু দেশের ১৮ কোটি মানুষের হাতে ছেড়ে দিন।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহ্বায়ক শেখ আবদুন নূরের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব বাবর চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাসদের সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির আব্দুল মজিদ আতাহারী, বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, আহত জুলাইযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফায়েজুর রহমান মনির প্রমুখ।