বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) জেলায় থেমে থেমে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমা না ছুঁলেও পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ইতোমধ্যে ডুবে গেছে নদীর দুই পাড়ের চরের কৃষি জমি। এতে কৃষের কষ্টের ফসলও ডুবে গেছে। ফসল পানিতে ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চরের কৃষকরা।
গেল বছরের বন্যায়ও চরের কৃষকরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। যার ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি তারা। নদীর পানি বাড়লে শুরুতেই ডুবছে তাদের ফসল। এবারও ডুবেছে তাদের কষ্টের ফসল।
সরেজমিন দেখা গেছে, কুমিল্লা সদর উপজেলার আমতলী ও কাচিয়াতলী এলাকায় হেক্টরের পর হেক্টর জমিতে করলা, মুলা, লাউসহ বিভিন্ন সবজির চাষ হয়েছিল, তা এখন পানিতে ভাসছে। ফসল ঘরে তোলার মাত্র দুদিন আগেই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে এসব ফসল। গোমতী নদীর পানির বিপৎসীমার সর্বোচ্চ পরিমাপ ১১ দশমিক ৭৩ মিটার হলেও পানির উচ্চতা ৬ থেকে ৮ মিটার হলেই ডুবে যায় চরের অনেক কৃষিজমি। তাই নদীর পানি বাড়লেই অনেক কৃষককে অপরিপক্ব ফসল তুলে ফেলতে হয়। অনেকেই হতাশ নিয়ে বসে আছেন নদীর ধারে।
আমতলী এলাকার কৃষক মো. সুজন মিয়া বলেন, ‘চরে প্রায় ৩ একর জমিতে করলাসহ নানা জাতের সবজি চাষ করেছি। আর মাত্র দুদিন পর এসব ফসল বাজারে বিক্রি করা যেত, কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে সব ফসল তলিয়ে গেছে। ব্যাংক ঋণ ও কিস্তি নিয়ে দুই বছর আগে থেকে কৃষিকাজ শুরু করেছি। আমার প্রায় ১২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। শুধু আমার নয়, এ চরে প্রায় ২০ জন কৃষক রয়েছে যাদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি গুনতে হবে। গত বছরও বন্যায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল এবার তার চেয়ে বেশি হয়েছে। যে মুহূর্তে ফসল ঘরে তুলব সে মুহূর্তে বন্যার পানিতে ডুবে গেছে ফসল। করলা যা পেরেছি সংগ্রহ করছি, অন্যান্য সব ফসল পানির নিচে। আমি এ ঋণ কীভাবে পরিশোধ করব।’
কাচিয়াতলি এলাকার কৃষক শাহাদাত হোসেন ও মিন্টু মিয়া বলেন, ‘গত বছরের বন্যা থেকে এ বছর লোকসান বেশি হয়েছে। কারণ গত বছর জমিতে ফলন তেমন ছিল না, কিন্তু এ বছর তো ফলন তোলার মুহূর্তে বন্যার পানি ভেসে গেছে। মরিচ, ধনে পাতা, মিষ্টি কুমড়া, মুলা এসব ৬ ফুট পানির নিচে। মাচায় কিছু করলা আছে সেগুলো নৌকায় করে গিয়ে সংগ্রহ করতেছি। এছাড়া বেশিরভাগ ফসল পানিতে ভেসে গেছে। এভাবে যদি বৃষ্টি থাকে তাহলে আমাদের মাথায় হাত দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, ‘গোমতী নদীর চরে চলতি বন্যায় প্রায় ১১ হাজার হেক্টর ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে পানি কমে গেলে কৃষকের কী পরিমাণ ক্ষতি হবে তা বলা যাবে। আমরা সব উপজেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি। সরকার যদি এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বরাদ্দ দেয় তাহলে তারা পাবেন।’