মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক স্থানীয় সময় রোববার (২৭ জুলাই) ‘ফক্স নিউজ সানডে’ অনুষ্ঠানে জানান, বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর শুল্ক আরোপের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা চূড়ান্ত, এবং তা আর বাড়ানো হবে না। তবে, শুল্ক কার্যকর হওয়ার পরও আলোচনার সুযোগ থাকবে বলে জানান তিনি।
ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য, জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে। সর্বশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও একটি চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এখনো কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি।
এই পাঁচটি দেশ যে হারে শুল্কে সম্মত হয়েছে, তা গত এপ্রিলে ঘোষিত ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্কের চেয়েও বেশি। তবে, যেসব দেশ এখনো চুক্তি করেনি, তাদের ওপর যেই মাত্রার শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তার তুলনায় এসব শুল্ক অনেকটাই কম।
বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন। তারা ইউএসটিআরের (মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিন দিনব্যাপী বৈঠকে বসবে। আলোচনায় মার্কিন শুল্কহার, বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য নিয়ে সরাসরি দর-কষাকষি হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, পাল্টা শুল্ক কমাতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে কিছু কৌশলগত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি বিমান কেনার অর্ডার, প্রতিবছর ৭ লাখ টন গম আমদানির চুক্তি এবং তুলা ও সয়াবিন আমদানির পরিমাণ তিনগুণ বৃদ্ধির ঘোষণা। এছাড়া বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০ কোটি ডলারের ভোজ্যতেল আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান জানান, ‘বাজারের বাস্তবতা মাথায় রেখে আমরা পারস্পরিক স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছি। এখন কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময়, যাতে পাল্টা শুল্কের চাপ কিছুটা কমানো যায়।’ তিনি বলেন, ‘আগে ১৪টি বোয়িং কেনার অর্ডার থাকলেও এখন তা ২৫টিতে উন্নীত করা হয়েছে। গম, তুলা ও সয়াবিন আমদানির ক্ষেত্রেও আগাম চুক্তি হয়েছে। এটা শুধু কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, বরং সরবরাহ চেইন নিরাপদ রাখা এবং বিকল্প বাজার গড়ে তোলার অংশ।’
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব প্রতিশ্রুতি কোনো একক নির্ভরতার প্রতীক নয়। ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য উৎস থেকেও আমদানি করা হবে। তবে বর্তমানে আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে মার্কিন শুল্কহার কমানো। কারণ, ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক দিয়ে মার্কিন বাজার ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বাণিজ্যসচিব আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রতিটি অনুচ্ছেদের জবাব আমরা দিয়েছি। এখন সময় এসেছে সরাসরি আলোচনার। চীনের বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়া কিছু উৎপাদন বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, সেটি ধরতে চাই।’
এদিকে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘মার্কিন বাজারে বাংলাদেশ যে অবস্থানে আছে, তা ধরে রাখতে হলে ভারত ও ভিয়েতনামের মতো শুল্কছাড় দরকার। না হলে বাজার হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে।’