সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭২৫ বর্গ কিলোমিটারের কাপ্তাই হ্রদের মাছ স্থানীয় মানুষের মাছের চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষেরও মাছের চাহিদা পূরণ করে থাকে। একই সঙ্গে সরকার হ্রদে উৎপাদিত মাছ বাজারজাতকরণের মধ্য দিয়ে আয় করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির আট উপজেলা মিলে হ্রদনির্ভর জেলে পরিবারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার। প্রতি বছর হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও বৃদ্ধির জন্য ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩ মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। বন্ধের এ সময়টাতে হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনা হ্রদে অবমুক্ত হয়। কার্পজাতীয় মাছের মধ্যে রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছের পোনা এখানে উৎপাদন করা হয়। হ্রদে অবমুক্ত করার জন্য পোনা উৎপাদনে ২০১৭ সাল থেকে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার বগাচত্বর ইউনিয়নে মারিশ্যাচর হ্যাচারি চালু করে বিএফডিসি। ২৫ একর জায়গা নিয়ে স্থাপিত মারিশ্যাচর হ্যাচারিতে কর্ণফুলী ও হালদা নদী থেকে ব্রুড মাছ সংগ্রহ করে নানান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রেণু উৎপাদন করা হয়। রেণু সংগ্রহের পর নার্সারি পুকুরে ১ বছর রেখে পোনা আকারে বৃদ্ধি পেলে কাপ্তাই হ্রদে অবমুক্ত করা হয়। বিএফডিসি রাঙামাটি বিপণণকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, মারিশ্যাচর হ্যাচারিতে বছরে মোট ১০০ কেজি রেণু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদন করতে পারছে প্রায় ৭০ কেজি রেণু। যে কারণে হ্রদে ১০০ মেট্রিক টন পোনা অবমুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সেটিও পূরণ করতে পারছে না। বিএফডিসি সর্বোচ্চ ৭০ মেট্রিক টন পোনা উৎপাদন করতে পারে। ১১টি নার্সারি পুকুর, ৯টি ডেবা পুকুর ও ১টি ক্রিক নার্সারি পুকুর দিয়ে পোনা উৎপাদনের কাজ করছে বিএফডিসি।
বিএফডিসি রাঙামাটি বিপণণকেন্দ্রের ফিস কালচারিস্ট মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, মারিশ্যাচর হ্যাচারিতে প্রজনন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। এরপর এই পোনা ছাড়া হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদে। প্রজনন প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রথমে হ্যাচারিতে হ্যাচিংজারে ডিম ছাড়া হয়। এরপর ডিম থেকে রেণু উৎপাদন হলে সেগুলাকে আমরা নার্সারি পুকুরে ছেড়ে দিই। পুরো প্রজনন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ অনুসরণ করে নার্সারি পুকুরে এক বছর প্রতিপালন করে কাপ্তাই হ্রদে অবমুক্ত করা হয়। হ্যাচারিতে উৎপাদিত রেণুগুলো অন্তঃপ্রজননমুক্ত, দ্রুত বর্ধনশীল এবং অত্যন্ত উন্নতমানের পোনা।
কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মোহাম্মদ ফয়েজ আল করিম বলেন, ২০১৭ সাল থেকে বিএফডিসির রাঙামাটিতে হ্যাচারি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তারপর থেকেই আমাদের রেণু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০০ কেজি। এ পর্যন্ত আমরা বছরে ৭০ কেজি পর্যন্ত রেণু উৎপাদন করতে পেরেছি। আবার রেণু থেকে উৎপাদিত মাছের পোনা ১০০ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এবার ৬০ মেট্রিক টন অবমুক্ত করতে পেরেছি কাপ্তাই হ্রদে। পুকুর সংকটের কারণে পোনা উৎপাদনে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। তাই ১০০ মেট্রিক টন পোনা উৎপাদনের জন্য ব্যক্তিপর্যায় থেকেও আমরা পুকুর ব্যবহারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ সংকটের সমাধান হলে আমরা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারব।