আজ শুক্রবার (২৫ জুলাই) বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে গণমিছিল শুরু হয়ে শাপলা চত্বরে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে পরিণত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে পশ্চিমের তাবেদার রাষ্ট্র বানানোর একটা সচেতন প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। জনগণের প্রবল আপত্তির মুখেও জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপন সে প্রচেষ্টারই অংশ। এছাড়া ভারত ও আমেরিকার প্রেসক্রিপশনে হাসিনা রেজিমের মতো জঙ্গি নাটক মঞ্চায়নের চেষ্টা চলছে।”
তারা আরও বলেন, “শহীদের রক্ত মাড়িয়ে ক্ষমতার মসনদ দখল করা ইন্টেরিম জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিলো ভারতীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এক রক্তাক্ত প্রতিরোধ। বাংলাদেশের জনগণ আর কোনো রাষ্ট্রের তাবেদার হতে চায় না। অথচ আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি দেশকে পরিকল্পিতভাবে মার্কিন বলয়ে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।”
সমাবেশে বক্তারা জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং তাদের বিরোধিতার পেছনে পাঁচটি কারণ তুলে ধরেন:
১. এই কার্যালয় বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে নাই।
ইসরাইল এবং ভারত সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। কিন্তু এসব দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কোন কার্যালয় নেই।
২. যে সব দেশে এই কার্যালয় আছে তারা মূলত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ।
এই কার্যালয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে।
৩. পার্বত্য অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী আদিবাসী সন্ত্রাসীদেরকে মানবাধিকারের নামে এ কার্যালয় সমর্থন দিবে, যা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।
৪. এ কার্যালয় সমকামিতা প্রচার ও প্রসারে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত, যা এদেশের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
৫. পার্বত্য চট্টগ্রাম ও আরাকান কেন্দ্রিক আমেরিকান স্বার্থকে রক্ষা করবে এ কার্যালয়।
এছাড়া বক্তারা ইসলামপন্থী নাগরিকদেরকে মিথ্যা জঙ্গি নাটকে ফাঁসানোর তীব্র প্রতিবাদ জানান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গি শব্দের অপপ্রয়োগ শুরু হয়েছে। যারা ইসলামি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেন, তাদের কণ্ঠরোধ করার জন্য এ শব্দের অপব্যবহার করা হয়। এই সংস্কৃতি বিগত আওয়ামী সরকার চালু করেছিল। দেশের আপামর ধর্মপ্রাণ জনতা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
ভিন্নমত দমনে হাসিনা রেজিমের জঙ্গিকার্ডকে হাতিয়ার বানানোর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “জঙ্গি নাটক ফিরে আসলে তা শুধু ইসলামপন্থীদেরকেই আক্রান্ত করবে না, বরং তা যে কোনো ভিন্নমত দমন করতে ব্যবহৃত হবে।”
বক্তারা আরও বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বিশ্বের যতগুলো দেশে আছে, সেগুলোর অর্ধেক গৃহযুদ্ধ আর বাকি অর্ধেক অরাজকতায় জর্জরিত। বাংলাদেশে কোনো গৃহযুদ্ধ- অরাজকতা না থাকলেও মানবাধিকারের অফিস খুলে দেশকে বিশৃঙ্খল করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
সরকারের সমালোচনা করে তারা বলেন, জাতিসংঘ যদি সত্যি বিশ্ব মানবাধিকার নিয়ে চিন্তিত থাকে তবে তাদের উচিত ফিলিস্তিন, বার্মা বা আসাম- গুজরাটে অফিস খোলা৷ কিন্তু সেটা না করে সমকামীতা, বিকৃত যৌনাচারকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এদেশে তারা কার্যক্রম চালাতে চায়। সরকার ইসলামি নীতি-নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে তাদেরকে অফিস খুলতে সহায়তা করছে, যা অনুচিত।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ডক্টর এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী, মুফতী জসিমউদ্দীন রাহমানী, আহমদ রফিক, মুফতী ফখরুল ইসলাম, মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনভী, আসিফ আদনান, মুফতী শফিকুল ইসলাম, মাওলানা ইসহাক খান, মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী, ডাক্তার মেহেদী হাসান, মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদরীস নদভী।